সাত বছর পর সৌদি ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাত, চুক্তি স্বাক্ষর

বরফ গলেছে আগেই। এবার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে উষ্ণ রূপ দেওয়ার প্রয়াসে সাত বছরেরও বেশি সময় পর মুখোমুখি হলেন সৌদি আরব ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। আজ সকালে বেইজিংয়ে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাত ও বৈঠকের পর তারা পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগ চালু করতে চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন।

সাত বছরের বেশি সময় পর মুখোমুখি হলেন সৌদি আরব ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিন গাংয়ের মধ্যস্থতায় বেইজিংয়ে পরস্পরের হাতে হাত রেখে স্বাভাবিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক পুণরায় চালু করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সউদ ও ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান।

এর আগে মার্চে চীনের মধ্যস্থতায় বেইজিংয়ে সৌদি ও ইরানি কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেবারেই দুই পক্ষ কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ চালুর বিষয়ে সমঝোতায় পৌছে। বিষয়টিকে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রাজনীতিতে চীনের প্রভাব ও দুতিয়ালির গুরুত্ব বাড়ার স্বাক্ষর হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। মার্চের সমঝোতার ধারাবাহিকতায় আজ বেইজিংয়ে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাত হয়।

সকালে বড় একটি হলরুমে হাসিমুখে করমর্দন ও ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে ছবি তোলার পর দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা পরস্পরের সঙ্গে একান্তে কিছুক্ষণ বৈঠক করেন। এরপর প্রতিনিধি পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর তারা একটি যৌথ সমঝোতা ও বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সৌদি আরব রাজ্য ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের মধ্যে সম্পর্ক সূচনার জন্য গত ১০ মার্চ সৌদি আরব, ইরান ও গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের মধ্যে স্বাক্ষরিত যৌথ ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আলোকে এবং দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও কনস্যুলার কার্যক্রম চালুর জন্য সমন্বয় কাঠামোর আওতায় আজ ১৫ রমজান ১৪৪৪ হিজরি মোতাবেক ৬ এপ্রিল ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

সমঝোতা অনুযায়ী, সৌদি আরব ও চীন দুই দেশের মধ্যে বিমান যোগাযোগ এবং সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় সফর পুণরায় চালু করবে। একইসঙ্গে দুই দেশ পরস্পরের নাগরিকদের অনুকূলে ভিসা ইস্যু কার্যক্রম চালু করবে।

মার্চে উপনীত সমঝোতায় উল্লিখিত দুই মাস সময়সীমার মধ্যে সৌদি আরব ও ইরান পরস্পরের রাজধানীতে দূতাবাস পুনরায় চালু করবে। একইসঙ্গে সৌদি আরব মাশাদ শহরে ও ইরান জেদ্দা শহরে নিজ নিজ কনসুলেট খুলবে।

সমঝোতা অনুযায়ী সৌদি আরব ও ইরান দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি সক্রিয় করবে এবং অর্থনীতি, বাণিজ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও যুব বিষয়ক কার্যক্রমে সহযোগিতা জোরদার করবে।

এতে বলা হয়, দুই দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে দুই দেশের ভ্রাতৃপ্রতীম জনগণের জন্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অধিকতর ইতিবাচক সুফল ঘরে তুলতে সৌদি আরব ও ইরান নিজেদের মধ্যে কারিগরি সহযোগিতা, পরামর্শমূলক বৈঠক ও আলোচনা জোরদার করবে। মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে এবং সেখানকার দেশগুলোর ও জনগণের কল্যাণে দুই পক্ষ সহযোগিতা জোরদার করবে।

বৈঠক শেষে দুই পক্ষ পরস্পরকে ধন্যবাদ জানায় এবং বৈঠক আয়োজনের জন্য চীনের ভূমিকার প্রশংসা করে। একইসঙ্গে উভয় পক্ষ সৌদি আরব ও ইরানের স্বার্থরক্ষায় প্রয়াসের জন্য সুইজারল্যান্ড সরকারকে ধন্যবাদ জানায়।