দক্ষিণ আফ্রিকা সফর: বিসিবি-সাকিব নাটকের টাইমলাইন

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সাকিব আল হাসানের খেলা, না খেলার বিষয়টি গত কিছুদিন টক অব দ্য কান্ট্রি ছিল। রীতিমতো নাটকই মঞ্চস্থ হয়েছে দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে।

শনিবার মিরপুরে একই সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও ক্রিকেটার সাকিব

বারবার রঙ বদলেছে, নাটকে এসেছে অনেক মোড়। শেষ পর্যন্ত ১৮০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে বদলে গেল নাটকের দৃশ্যপট। রাগ-অভিমান, আলোচনা-সমালোচনা পর্ব পেরিয়ে শনিবার শান্তির বার্তাই দিয়েছে দুই পক্ষ। অনেক নাটকীয়তা পেরিয়ে আগামীকাল দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছেন সাকিব।

তবে এটাই নাটকের শেষ দৃশ্য, এমন নিশ্চয়তা হয়তো কেউই দিতে রাজি হবেন না। গত কয়েক দিনে মঞ্চস্থ নাটকের পুরো দৃশ্য তথা ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।

২৮ ফেব্রুয়ারি: দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট খেলবেন কি সাকিব? চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে শেষে রাতে সাংবাদিকদের বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছেন, যেহেতু ও (সাকিব) আইপিএলে নেই, আইপিএলে ও যাচ্ছে না তাহলে তো আমি কোনো কারণ দেখছি না দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট না খেলার। আইপিএলের জন্যই যেতে চাচ্ছিল না। যেহেতু আইপিএল নাই সে খেলবে।

১ মার্চ: চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরেই দুই ঘণ্টার ছুটিতে টিম হোটেল ছাড়েন সাকিব। ব্যক্তিগত বাণিজ্যিক কাজে একটি শো রুম উদ্বোধন করেন তিনি। সেখানে তার প্রতি সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট খেলবেন কি না? সাকিব বলেছিলেন, আজ ছুটিতে আছি। ছুটির দিনে খোলাসা করার কিছু নেই। জানতে চান, জানতে পারবেন।

৩ মার্চ: জল্পনা-কল্পনা থামিয়ে সাকিবকে নিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য ওয়ানডে ও টেস্ট দল ঘোষণা করে বিসিবি।

৬ মার্চ: আফগানিস্তান সিরিজ শেষ, সবাই ছুটিতে। দুবাই যাওয়ার আগে রাতে বিমানবন্দরে বোমা ফাটালেন সাকিব। সাংবাদিকদের বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার বলেন, আমি মানসিক ও শারীরিকভাবে সে অবস্থায় আছি, আমার মনে হয় না আমার পক্ষে এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সম্ভব।

৭ মার্চ: দুবাই যাওয়ার আগে সাকিবের বক্তব্যে তোলপাড় ক্রিকেটাঙ্গন। হুট করে অভিজ্ঞ এ ক্রিকেটারের সিদ্ধান্ত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন বিসিবি সভাপতিও। কারণ সাকিব তাকেই কথা দিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা যাবেন, তাই দলে রাখা হয়েছিল এ অলরাউন্ডারকে।

এদিন সন্ধ্যায় নিজ বাসভবনে সাকিবকে উদ্দেশ করে পাপন বলেছিলেন, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এটা কে জানে? মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলে আইপিএল খেলতে চাচ্ছিল নাকি? মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকলে তো বলতো আমি আইপিএলও খেলব না। ধরুন আইপিএলে ওকে নেওয়া হল, তখন কি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতো? আমার মাথায়ই ঢুকছে না।

৯ মার্চ: সাকিব তখনও দুবাই থেকে ফিরেননি। তবে এ ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলেই তাকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি দেয় বিসিবি। এ সব ধরনের ক্রিকেট থেকে তাকে বিশ্রাম নিতে বলা হয়েছে। ধানমন্ডিতে বিসিবি সভাপতির অফিসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেছিলেন, সাকিবের ব্যক্তিগত চাওয়ার কথা চিন্তা করে আমরা একটা সিদ্ধান্ত দিয়েছি। যেহেতু বলছে সে মানসিক ও শারীরিকভাবে আনফিট, তাকে বিশ্রাম দেওয়া দরকার। আমরা তাকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম দিতে সম্মতি দিয়েছি।

১২ মার্চ: অনেক চড়াই-উতরাই শেষে বরফ গলেছে। মিরপুর স্টেডিয়ামে শান্তি আলোচনাই হলো দুই পক্ষের। বোর্ড পরিচালকদের নিয়ে সাকিবের সঙ্গে মিটিং শেষে দুপুরে বিসিবি সভাপতি সাংবাদিকদের বলেছেন, আমার সাথে লম্বা আলোচনা হয়েছে এবং জানিয়েছে, সে সব ফরম্যাট খেলতে ইচ্ছুক। এই দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকেই।

পরে সাকিবও এগিয়ে এসে নিজের নতুন সিদ্ধান্ত জানান। মত পরিবর্তনের কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, যেহেতু আমি তিনটা ফরম্যাটেই আছি, আমি তিন ফরম্যাটেই সবসময় এভেইলেবল থাকব। বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে কোন সময় আমাকে বিশ্রাম দেওয়া জরুরি কিংবা দেওয়া দরকার। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকেই এটা হবে। তো আমি দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও এভেইলেবল।