পাপন: ক্রিকেটে ভয় পেয়ে খেলার কোন সুযোগ নেই

আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মেহেদী হাসান মিরাজের মহাকাব্যিক ১৭৪ রানের জুটিতে প্রথম ওয়ানডেতে আফগানিস্তানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ দল। চট্টগ্রামে বুধবার ৪ উইকেটের জয় নিশ্চিত হওয়ার পরই টিভি স্ক্রিনে দেখা গেছে প্রেসিডেন্টস বক্সে জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা বিসিবির কর্তারা। স্টেডিয়াম জুড়ে ছিল করতালির জোয়ার। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও খেলা দেখেছেন স্টেডিয়ামে বসেই।

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেছেন

জয়ের পর করতালিরত পাপনকে দেখা গেছে টিভিতে। ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন বিসিবি সভাপতি। সাংবাদিকদের দেওয়া প্রশ্নের জবাবে পাপনের মন্তব্য পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: শুরুতেই সংকট কেউ প্রত্যাশা করেনি। ৬ উইকেট চলে যাওয়ার পরেও আপনি কনফিডেন্ট ছিলেন কিনা বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত খেলতে পারবে?

সত্যিকার অর্থে কনফিডেন্ট ছিলাম না। আমরা সবাই বলছিলাম আমরা যদি ৫০ ওভার খেলতে পারি তাহলে জিতব। এরপর আমি বললাম এই দুজন (আফিফ-মিরাজ) যদি খেলে যেতে পারে তাহলে জেতার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু মনে হচ্ছিল এটাও অলমোস্ট ইমপসিবল। কারন যেভাবে আমাদের প্রথম ছয়টা উইকেট গেল, মনে হচ্ছিল ওদের বল খেলা সম্ভবই না। খেলার অযোগ্য। কিন্তু এরা দুজন এসে যেভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে গেল, কোন রিস্ক না নিয়ে। জাস্ট উইথ ফুল কনফিডেন্স। ওদের কখনোই মনে হয়নি ওরা নার্ভাস। অথচ প্রথম দিকে মনে হয়েছে ওরা খুব দ্বিধাগ্রস্থ কি করবে, না করবে। যে সমস্ত শট খেলেছিল তাতে সত্যিই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। তবে যত সময় যাচ্ছিল, বিশ্বাসটা জোরালো হচ্ছিল ওরা থাকলে জিতে যাব। অসাধারণ ইনিংস খেলেছে আফিফ-মেহেদী দুইজনে।

প্রশ্ন: এই দুজন নিয়ে আপনারও আত্মবিশ্বাস ছিল না। এমন ক্রাইসিস মোমেন্ট আশীর্বাদ কিনা?

আসলে এটা বিরাট ক্রাইসিস। পরশু দিনও নিশ্চিত ছিল না ওরা দুইজন খেলবে। স্কোয়াডে ওরা থাকবে কিনা। চিন্তা করছি ওরা যদি না খেলতো কি হতো? আমার বাংলাদেশ জিতেছে। এটা খুশি না হওয়ার কোন কারণ নাই। আফগানিস্তানের সাথে ওডিআই তে আমরা যে জিতব আমার ধারণা এটা সবাই জানত। কিন্তু যে পরিস্থিতিতে আমরা ছিলাম এটাকে হ্যান্ডেল করার মতো সাহস ও জয়ের দৃঢ়তা, এটা যে আমাদের দুই ইয়াং স্টার দেখিয়েছে তা অসাধারণ। তাই আমি মনে করি আমাদের নতুন প্রজন্মের যেসব খেলোয়াড়রা আছে তাদের জন্য ভাল খবর। তাদের ভবিষ্যত অতোটা খারাপ না। যতটা ভেবেছিলাম।

তবে এটা যেমন খুশির ব্যাপার, তেমনি প্রথমদিকে আমরা যেভাবে উইকেটগুলো দিয়ে এসেছি সেটা একটা দুশ্চিন্তারও ব্যাপার।

প্রশ্ন: চট্টগ্রামে উইকেট খুব ভালো ছিল। কেমন দেখেছেন উইকেট?

উইকেট নিয়ে আমার কোনদিন প্রত্যাশা ছিল না। এটা আমার কাছে কোন ইস্যু না। উইকেট যেমনই হোক খেলতে হবে। এটা আমাদের দেশের উইকেট। এটা নিয়ে আবার কি তাদেরকে বলার আছে। এমন তো না যে তারা এই উইকেটে কখনো খেলেনি। ঢাকা চট্টগ্রামে আমাদের চেয়ে বেশি এক্সপেরিয়েন্স তো কারো নেই। উইকেট ইজ অ্যা ইমম্যাটেরিয়াল। আমি মনে করি উইকেট ইজ এ গুড উইকেট। কিন্তু ভাল উইকেট থেকেও তো লাভ হয়নি। আপনি ধরেন এই দুইজনের কেউ যদি না থাকতো আমরা তো হেরে যেতে পারতাম। তো লাভ হতো কি। তাই উইকেট কোন ইস্যু না।

প্রশ্ন: আফগানিস্তানের বোলিং আক্রমণ ভালো। এটা নিয়ে দল একটু চিন্তায় পড়ে গেছে কিনা?

ক্রিকেটে ভয় পেয়ে খেলার কোন সুযোগ নেই। আপনি যদি আগের থেকেই চিন্তা করেন ওর বল কি করব, তার বল কি করবো। আফগানিস্তান ভাল একটি টিম। তাদের বিশ্বসেরা বোলার আছে। সেটা নিয়ে আমাদের চিন্তা নেই। প্রথমে আমরা যাদের নিয়ে চিন্তিত থাকার কথা তাদের কাছে কিন্তু আমরা উইকেটটা দিইনি। আমরা উইকেটটা দিয়েছি একজন পেসারের হাতে। সবাই যদি তাদের টেকনিকটা ঠিক রেখে খেলে আমাদের টিম অনেক ভালো। তবে আফগানিস্তানকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই।

বলের মেরিট অনুযায়ী খেলেছে আফিফ আর মেহেদী। এরা কোন বাজে শট খেলেনি। খুব এগ্রেসিভলি খেলতে গিয়েছে তাও না। যখন যেটা মারার মেরেছে। এটাই তো ক্রিকেট।

প্রশ্ন: মিরাজ খুব ভয় পায় না। আপনার ফোন ধরেনি। এর সাহসিকতা নিয়ে আপনার কোন সফট কর্ণার আছে নাকি?

আসলে প্লেয়ারদের সাথে আমার আলাদা একটা রিলেশনশিপ আছে। এটা সিনিয়র প্লেয়ারদের সাথেও আছে। জুনিয়র কিছু প্লেয়ার যেমন তাসকিন, মিরাজ এবং মুস্তাফিজ এই তিনজনের সাথে আরেকটু বেশি আছে।মিরাজ যখন ফোন ধরেনি তখন শুধু কষ্ট পেয়েছিলাম।

প্রশ্ন: আরো দুটি ম্যাচ আছে, পরের ম্যাচ নিয়ে আপনার পরামর্শ?

আমি বারবার একটা কথা বলছি যত দিক দিয়ে বিচার করেন না কেন আমাদের টিমটা বেটার টিম। আমাদের প্লেয়াররা র্যাংকিং অভিজ্ঞতা সবদিক দিয়ে এগিয়েছে। আমদের দেশের মাটিতে আমরা যদি ওদের সাথে সাহস করে না খেলি, বেশি চিন্তা করি তাহলেই ঝামেলা। তাই প্লেয়াররা যদি ঠান্ডা মাথায় খেলে তাহলে সহজেই আমরা সিরিজ জিততে পারবো।

প্রশ্ন: মিরাজ ৪ বছর ধরে টি-টোয়েন্টি দলের বাইরে, ভবিষ্যতে কোন ভূমিকা রাখবেন কিনা?

এটা নির্বাচক ও ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার। আমি ইলেকশনের পর থেকে এখন পর্যন্ত একটু ডিটাচ। ওরা চার মাস সময় চেয়েছে, এ মাসে শেষ হবে। আমি এখন এগুলো নিয়ে কথা বলতে চাই না।