পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেমন ঈদ

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর সবার সামনে এলো ঈদের আনন্দ। কবির ভাষায়, ‘রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। ঈদের দিনে পৃথিবীর সকল মুসলিম প্রধান দেশে আনন্দের ঢল নামে। তবে প্রত্যেকটি দেশেই আনন্দ উদযাপনের কিছু নিজস্ব রীতি রয়েছে।

চলুন দেখা যাক, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঈদ উদযাপনের রীতি-নীতি।

সৌদি আরব

সৌদি আরবে অঞ্চলভেদে ঈদের অনুষ্ঠানেও রকমফের হয়। তবে সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, ঈদের নামাজ শেষে সবাই তাদের বাবার বাড়িতে গিয়ে জড়ো হয়। এদেশেও ছোটদের সালামি দেয়ার প্রচলন রয়েছে। এছাড়া তাদেরকে নানান উপহারও দেয়া হয়। বড়দের জন্য প্রত্যেক বাড়িতেই বিশেষ ভোজের ব্যবস্থা থাকে।

দেশটির আল কাসিম প্রদেশে ঈদের দিন সকালে বাড়ির বাইরে বিশাল বিশাল কম্বল বিছিয়ে দেয়া হয়। প্রত্যেক বাড়িতে প্রচুর খাবার-দাবারের আয়োজন থাকে। সেই খাবার নিয়ে তাঁরা বাড়ির বাইরে এসে জড়ো হয় এবং মিলেমিশে খায়। এছাড়া সৌদি আরবের যারা ধনী ব্যক্তি আছেন, তাঁরা অনেকেই প্রচুর খাবার কিনে অসহায় দরিদ্র মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে আসেন।

তিউনিশিয়া

তিউনিশিয়ায় সরকারি ছুটি মাত্র দুই দিন হলেও তিন থেকে চার দিন ধরে ঈদ উদযাপনের চল রয়েছে। ঈদের সময় দেশটিতে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবকে উপহার দেয়ার জন্য বিশেষ এক ধরণের বিস্কুট তৈরি করা হয়। এছাড়া নানান রকম খাবার দাবারের ব্যবস্থা থাকে প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে। রাতে প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে গান ও নাচের আসর বসে। যা ঈদ আনন্দকে আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ

এই পাক-ভারত উপমহাদেশে ঈদ এলেই মেয়েদের মধ্যে মেহেদি লাগানোর ধুম পড়ে যায়। সাধারণত ঈদের আগের দিন ‘চাঁদ রাতে’ মেহেদি বেশি লাগানো হয়। এছাড়া এই চাঁদ রাতে অনেক মানুষ কেনাকাটা করতে যেতে পছন্দ করে। ঈদের দিন সকালে ছোট-বড় সবাই মিলে ঈদের নামাজ পড়তে যায়। নামাজ শেষে সবাই কোলাকুলি করে। ছোটরা বড়দের কাছ থেকে সালামি পাওয়ার চল রয়েছে উপমহাদেশে। বড়দের জন্য প্রত্যেক ঘরে ঘরে পোলাও-মাংস-মিষ্টান্নের ব্যবস্থা থাকে। উপমহাদেশের সব দেশেই ঈদ উপলক্ষ্যে তিন দিনের সরকারী ছুটি পাওয়া যায়।

 ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া

ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ। দেশটিতে ব্যাপক উৎসব ও আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঈদের আনন্দ শুরু হয়। মালয়েশিয়াতেও প্রায় একই রকম আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপন করে মানুষ। ঈদ উপলক্ষ্যে দু’টি দেশেই সরকারি বন্ধ রয়েছে। ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় ঈদের আগের রাতে বাড়ির চারপাশে তেলের প্রদীপ জ্বালানোর প্রচলন আছে। ঈদ উপলক্ষ্যে শহরের মানুষ গ্রামে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা দেখার মতো। গ্রামে ঈদের দিনের বিশেষ খাবার হিসেবে কেতুপাত, দোদোল, লেমাং ইত্যাদি রান্না করা হয়।

 তুরস্ক

তুরস্কতে ঈদের দিনের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে ছুটি পালন করা হয়। এই ছুটিকে বলা হয় ‘বায়রামা’। দেশের অন্যতম প্রধান মসজিদ ‘ব্লু মস্ক’কে বিভিন্ন রকমের আলোকসজ্জায় সাজানো হয়। সবাই সবাইকে ‘বেরামিনিজ মোবারক ওলসন, বেরামিনিজ কুতলু ওলসন’ কিংবা ‘মুতলু বেরামলার’ বলে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ঈদের দিন সকালে পরিপাটি হয়ে সবাই নামাজ আদায় করতে যান। মহিলা ও শিশুরা অন্যের বাড়িতে বেড়াতে যান। পুরুষরা নামাজ শেষে কবরস্থানে গিয়ে তাঁদের পূর্বসূরিদের জন্য মাগফেরাত কামনা করেন। তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রথা হলো, বিশেষ একটি কায়দায় বয়স্কদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা। বয়সে ছোটরা বয়স্ক ব্যক্তির ডান হাতে চুমু দিয়ে হাতটি তাঁর নিজের কপালে ছুঁইয়ে ঈদের শুভেচ্ছা প্রদান করেন। এছাড়া বড়রা ছোটোদেরকে চকোলেট ও ঐতিহ্যবাহী খাবার কিনে দেয়।

ইরান

ইরানে ঈদ-উল-ফিতর অনেকটা নীরবেই উদযাপিত হয়। এর কারণ দেশটি মূলত শিয়া অধ্যুষিত। তারপরও প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে ব্যক্তিগতভাবে ঈদ উদযাপন হয়। অনেক ধনী ব্যবক্তি ঈদের দিনে গরু বা ভেড়ার মাংস গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে থাকে।

মিশর

মিশরে ঈদের জন্য সরকারি বন্ধ মাত্র একদিন। এই দিন সব ধরণের দোকানপাট বন্ধ থাকে। ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়ার মধ্য দিয়ে দিনটি শুরু হয়। নামাজ শেষে সবাই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনেকেই নীলনদ ভ্রমণে বের হয়। কেউবা সিনাই উপত্যকায় শারম এল শেখ শহরে বিনোদনে যান। ঈদের দিন ছোটোরা ‘ঈদ-এ-ইয়াহ’ নামে এক ধরণের সালামি পায় বড়দের কাছ থেকে। আর বড়দের জন্য বাড়িতে বাড়িতে সবার প্রিয় খাবার ফাতা রান্না করা হয়।

আপনি আরও পড়তে পারেন

সৌদি আরবে ঈদ পালিত হচ্ছে আজ

নিউজিল্যান্ডের জন্য নতুন পতাকা

ইরানের রাস্তায় বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস