গাজায় বালির কবর থেকে ১৫ উদ্ধারকর্মীর মরদেহ উদ্ধার

গাজার দক্ষিণে একটি বালির কবর থেকে ১৫ জন উদ্ধারকর্মীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা রেড ক্রিসেন্ট, প্যালেস্টাইন সিভিল ডিফেন্স এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সদস্য ছিলেন।

গাজায় বালির কবর থেকে ১৫ জন উদ্ধারকর্মীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিভাগের প্রধান টম ফ্লেচার জানিয়েছেন, ধ্বংসপ্রাপ্ত ও স্পষ্টভাবে চিহ্নিত গাড়ির কাছে তাদের মরদেহগুলো পুঁতে রাখা হয়েছিল। তিনি অভিযোগ করেছেন, জীবন বাঁচাতে গিয়ে উদ্ধারকর্মীরা ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার দাবি করেছেন তিনি।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই ঘটনার বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করেনি। তবে তারা জানিয়েছে, একটি সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্র থেকে মরদেহগুলো সরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছে। লাশ বালুর নিচে পুঁতে রাখা বা গাড়ি ধ্বংসের কারণ সম্পর্কে তারা কিছু জানায়নি।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, মরদেহগুলো অগভীর সমাধিতে নিক্ষেপ করা হয়েছে, যা মানবিক মর্যাদার চরম লঙ্ঘন। গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৪০৮ জন সাহায্যকর্মী নিহত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) এই ঘটনায় মর্মাহত। রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আন্তর্জাতিক ফেডারেশন (আইএফআরসি) জানিয়েছে, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর রেড ক্রস বা রেড ক্রিসেন্ট কর্মী নিহত হওয়ার এটিই সর্বশেষ বড় ঘটনা। রেড ক্রিসেন্টের নিখোঁজ ৯ জনের মধ্যে এখনও একজনের সন্ধান মেলেনি।

আইএফআরসির মহাসচিব জাগান চাপাগাইন মর্মাহত। তিনি বলেছেন, অ্যাম্বুলেন্স কর্মীরা আহতদের বাঁচাতেই এগিয়ে গিয়েছিলেন। তাদের গাড়ি ও ইউনিফর্মে স্পষ্ট চিহ্ন থাকায় তাদের সুরক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।

গত ২৩ মার্চ রাফায় আহতদের সহায়তা করতে গিয়ে এই দলটি নিখোঁজ হয়। ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ অভিযান চালু করার পর এ ঘটনা ঘটে। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট একই এলাকা থেকে ৬ জন সিভিল ডিফেন্স সদস্য ও এক জাতিসংঘ কর্মীর লাশ উদ্ধার করেছে। তারা দাবি করেছে, ইসরায়েলি বাহিনীই এই কর্মীদের টার্গেট করে হত্যা করেছে। তবে রেড ক্রস সরাসরি কাউকে দায়ী করেনি।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়কারী সংস্থার (ওসিএইচএ) গাজা প্রধান জোনাথন হুইটল মরদেহ উদ্ধারের স্থানটিকে ‘গণকবর’ বলে বর্ণনা করেছেন। তার প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, বিকৃত একটি ফায়ার ট্রাক ও জাতিসংঘের গাড়ির পাশে বালু খুঁড়ে লাশ তোলার চেষ্টা করছে রেড ক্রিসেন্টের দল।

ওসিএইচএর একজন মুখপাত্র বলেছেন, এটি বিস্ফোরণের কারণে সৃষ্ট কোনো বালুর স্তূপ নয়, বরং বুলডোজার বা ভারী যন্ত্র দ্বারা তৈরি একটি গণকবর। প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি জানান, প্রথম দলটি ২৩ মার্চ ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হয়। পরে সহকর্মীদের খুঁজতে আসা অন্য উদ্ধারকারীদেরও টার্গেট করা হয়।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের গাজা অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০৬০ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে জাতিসংঘ গাজায় তাদের আন্তর্জাতিক কর্মীদের এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনছে।