জাতিসংঘ কর্মকর্তা: গাজায় পরিস্থিতি ‘নরকের মতো’, যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর আরও ভয়াবহ

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি গাজা উপত্যকার পরিস্থিতিকে ‘নরকের মতো’ বলে বর্ণনা করেছেন। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

ফিলিপ লাজারিনি

আন্তালিয়া ডিপ্লোমেসি ফোরামে (এডিএফ) আনাদোলু এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গাজার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ফিলিপ লাজারিনি এসব কথা বলেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের ‘গাজা একটি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে’ মন্তব্য উল্লেখ করে লাজারিনি বলেন, ‘সেখানে একেবারেই কোনো নিরাপদ স্থান নেই এবং মানুষ ক্রমাগত স্থানান্তরিত হচ্ছে, ক্রমাগত তাদের সরে যাওয়ার বা বাস্তুচ্যুতির আদেশ দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি বাসিন্দাদের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন। তারা প্রতিদিনের বোমাবর্ষণের পাশাপাশি ‘ক্রমবর্ধমান ক্ষুধা, রোগ এবং অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার সঙ্গে লড়াই করছে।’

লাজারিনি মন্তব্য করেন, ‘যুদ্ধবিরতির আগে আমরা ভেবেছিলাম পরিস্থিতি এমনিতেই নরকের মতো, আমরা তলানিতে পৌঁছে গেছি। কিন্তু যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর পরিস্থিতি যেন আরও খারাপ হয়েছে।’

‘বিতরণের জন্য কোনো মানবিক সহায়তা নেই’

লাজারিনি জানান, ইউএনআরডব্লিউএ গাজায় ১২,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি কর্মীকে নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু তিনি উল্লেখ করেন, ‘মানবিক সহায়তা বিতরণের ক্ষেত্রে, এখন আর বিতরণের জন্য কোনো সাহায্য অবশিষ্ট নেই। প্রায় এক মাস আগে সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তাই গাজা উপত্যকার অভ্যন্তরে ত্রাণ সহায়তা এখন প্রায় সম্পূর্ণ শেষ হয়ে গেছে।’

তিনি ব্যাখ্যা করেন, ইসরায়েল পুনরায় হামলা শুরু করার পর জাতিসংঘ ‘নিরাপত্তাজনিত’ কারণে ২৪ মার্চ সেখানে নিজেদের উপস্থিতি কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি যে জাতিসংঘ যে আবাসন থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল, সেখানে একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেক আন্তর্জাতিক কর্মী আহত হয়েছেন এবং একজন নিহত হয়েছেন।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘এই সবকিছুই এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা প্রমাণ করে। ক্রসিংয়ের বিষয়ে আমরা ক্রমাগত অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা গাজা উপত্যকায় অবাধ ও নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা প্রবাহ নিশ্চিত করার এবং জিম্মিদের মুক্তিরও আহ্বান জানাচ্ছি।’

গাজায় ১৫ জন ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মীকে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু বানানো প্রসঙ্গে লাজারিনি বলেন, এটি আবারও ‘মানবিক কর্মীদের প্রতি চরম অবজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি চরম অবজ্ঞার’ প্রমাণ।

লাজারিনি উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৪০০ জনেরও বেশি মানবিক কর্মী নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৮০ জনেরও বেশি ইউএনআরডব্লিউএ’র কর্মী।

লাজারিনি বলেন, ‘এই সর্বশেষ ঘটনাটি (১৫ জন ত্রাণকর্মীকে হত্যা) অবশ্যই একটি নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে, কারণ এই ব্যক্তিদের স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তাদের উপস্থিতি কেউ উপেক্ষা করতে পারে না এবং মনে হচ্ছে তাদের পরিকল্পিতভাবে একের পর এক হত্যা করা হয়েছে।’

তিনি এই হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্বাধীন তদন্ত পরিচালনার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি উল্লেখ করেন, দায়ীদের এখনো পর্যন্ত শাস্তি দেওয়া হয়নি।

‘বয়ান যুদ্ধ’

লাজারিনি পরিস্থিতির ‘বয়ান যুদ্ধ’ নিয়ে কথা বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, একটি বয়ান আসছে ইসরায়েল থেকে এবং অন্যটি গাজা থেকে, এবং এই বয়ানগুলো ‘কখনো মেলে না’।

তিনি ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করার জন্য প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, স্বাধীন আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের উপস্থিতির মাধ্যমে তাদের কাজের সমর্থন করা উচিত।

তিনি গাজার ঘটনা সম্পর্কে ভুল তথ্য, বিকৃত তথ্য এবং অপপ্রচার রোধে এই অঞ্চলে আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।