ইরানকে ট্রাম্পের হুমকি, ওমানে আলোচনার প্রস্তুতি; মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক শক্তি কতটুকু?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে রাজি না হলে সামরিক ব্যবস্থার হুমকি পুনর্ব্যক্ত করার পর এই সপ্তাহান্তে ওমানে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান।

ছবি - সংগৃহীত

পশ্চিমা দেশগুলোর সন্দেহ, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে, যদিও ইরান তা অস্বীকার করে। ট্রাম্প বলেছেন, ইরান চুক্তিতে না এলে ‘এমন বোমা হামলা হবে, যা তারা আগে কখনো দেখেনি’। এমন অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি সম্পর্কে এখানে তুলে ধরা হলো:

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলো কোথায়?

যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে ঘাঁটি পরিচালনা করে আসছে। সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় ঘাঁটি হলো কাতারের আল উদিদ বিমান ঘাঁটি, যা ১৯৯৬ সালে নির্মিত হয়।

বাহরাইন, কুয়েত, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতেও মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে।

সাধারণত এই অঞ্চলে প্রায় ৩০,০০০ মার্কিন সৈন্য থাকে, যা প্রধান অভিযানগুলোর সময়ের তুলনায় অনেক কম। ২০১১ সালে আফগানিস্তানে ১ লাখের বেশি এবং ২০০৭ সালে ইরাকে ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা ছিল।

সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছোট ছোট ঘাঁটিগুলোতে প্রায় ২,০০০ মার্কিন সৈন্য রয়েছে। ইরাকে প্রায় ২,৫০০ মার্কিন সদস্য মোতায়েন আছে, যার মধ্যে বাগদাদের ইউএস ইউনিয়ন থ্রি সাইটও অন্তর্ভুক্ত।

ট্রাম্প কী পরিমাণ অতিরিক্ত সৈন্য পাঠিয়েছেন?

পেন্টাগন জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তারা মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত সেনা পাঠিয়েছে।

মার্চ মাসে পেন্টাগন প্রায় ছয়টি বি-২ বোমারু বিমান ভারত মহাসাগরের দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপে অবস্থিত একটি মার্কিন-ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটিতে স্থানান্তর করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে দ্রুত হস্তক্ষেপ করার জন্য বিমানগুলো আদর্শ অবস্থানে থাকবে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হ্যাগসেথ বলেছেন, এটিকে তেহরানের জন্য বার্তা হিসেবে দেখা হবে কিনা, তা নির্ভর করছে ইরানের ওপর।

পেন্টাগন অন্যান্য যুদ্ধবিমান এবং আরও আকাশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে, যার মধ্যে একটি প্যাট্রিয়ট মিসাইল ডিফেন্স ব্যাটালিয়নও রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে দুটি মার্কিন বিমানবাহী রণতরী রয়েছে এবং প্রতিটিতে হাজার হাজার সৈন্য ও কয়েক ডজন বিমান বহন করার ক্ষমতা আছে।

কেন এই অঞ্চলে মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হয়েছে?

বিভিন্ন কারণে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনা মোতায়েন রাখা হয়েছে। ইরাকের মতো কিছু দেশে মার্কিন সেনারা দায়েশ জঙ্গি এবং স্থানীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে ইরান-সমর্থিত যোদ্ধারা মার্কিন সেনাদের ওপর হামলা চালিয়েছে, যার পাল্টা জবাবও দিয়েছে মার্কিন বাহিনী।

এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন মিত্র জর্ডানে শত শত মার্কিন প্রশিক্ষক রয়েছেন এবং তারা বছরজুড়ে ব্যাপক মহড়া পরিচালনা করেন।

কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো অন্যান্য দেশে মার্কিন সেনারা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনে আঞ্চলিক সামরিক অভিযানে সহায়তার জন্য অবস্থান করছে।

যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথি বাহিনীর বিরুদ্ধে বোমাবর্ষণ অভিযান পরিচালনা করছে।

এই অঞ্চলের মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে কি প্রায়ই হামলা হয়?

মার্কিন ঘাঁটিগুলো অত্যন্ত সুরক্ষিত স্থাপনা, যেখানে ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন থেকে রক্ষা করার জন্য আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও রয়েছে। কাতার, বাহরাইন, সৌদি আরব, কুয়েতের মতো দেশগুলোর ঘাঁটিগুলোতে সাধারণত হামলা হয় না।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন সেনারা প্রায়শই হামলার শিকার হয়েছে।

২০২৩ সাল থেকে, হুথি আন্দোলন ইয়েমেনের উপকূলবর্তী জাহাজগুলোর ওপর ১০০ টিরও বেশি হামলা চালিয়েছে। তারা বলেছে, গাজায় ইরান-সমর্থিত হামাসে সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে এই হামলা চালানো হচ্ছে।

এর মধ্যে এই অঞ্চলে মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও অন্তর্ভুক্ত। এখন পর্যন্ত কোনো হুথি হামলায় কোনো মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

আরব নিউজ অবলম্বনে