সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক: হাসনাতের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত সরজিসের
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
জাতীয় নাগরিক পার্টির (জানাপা) প্রধান সংগঠক (উত্তর) সরজিস আলম সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে ১১ মার্চের বৈঠক নিয়ে দলের প্রধান সংগঠক (দক্ষিণ) হাসনাত আব্দুল্লাহর বক্তব্যের কিছু অংশের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তিনি ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ প্রসঙ্গটিকে প্রস্তাব নয়, বরং একটি মতামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম
আজ (২৩ মার্চ) দুপুর ১২টা ১২ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে সরজিস লেখেন, ‘যেভাবে হাসনাত সেদিন সেনাপ্রধানের বক্তব্য শুনেছেন ও গ্রহণ করেছেন এবং ফেসবুকে লিখেছেন, আমার দৃষ্টিকোণ থেকে তাতে কিছুটা পার্থক্য আছে।’
সেনাবাহিনী সদর দপ্তর নেত্র নিউজকে দেওয়া এক বিবৃতিতে স্বীকার করে যে, ১১ মার্চ ঢাকা সেনানিবাসে জেনারেল ওয়াকার হাসনাত এবং সরজিসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তবে সেনাবাহিনী হাসনাতের বক্তব্যকে ‘হাস্যকর এবং অপরিপক্ক গল্প’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। নেত্র নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেনাবাহিনী হাসনাতের পোস্টকে ‘একটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্টান্ট’ বলেও অভিহিত করেছে।
এদিকে, সরজিস তার পোস্টে বলেন, ‘হাসনাতের ফেসবুক পোস্টে যেভাবে সুরটি তুলে ধরা হয়েছে, আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, কথোপকথনটি তেমন চরম ছিল না। অবশ্যই, অন্য যে কোনও দিনের তুলনায় কথোপকথনটি অবশ্যই আরও স্পষ্ট এবং আত্মবিশ্বাসী ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের স্থিতিশীলতার জন্য একটি রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রয়োজন — এই মতামত স্পষ্টভাবে এবং সরাসরি প্রকাশ করা হয়েছে।’
সরজিস তার ফেসবুক পোস্টের শুরুতে বলেন, ‘সেদিন (১১ মার্চ) আমি এবং হাসনাত সেনাপ্রধানের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। দলের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে তিনি আসতে পারেননি।’
তিনি আরও লেখেন, ‘শুরুতেই স্পষ্ট করে বলি — সেদিন আমাদের সেনানিবাসে ডাকা হয়নি। বরং প্রয়োজনে যেকোনো জিজ্ঞাসা বা ব্যাখ্যার জন্য আমরা সেনাপ্রধানের সামরিক উপদেষ্টার সঙ্গে বার্তা বিনিময় করতাম।’
‘পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বার্ষিকীতে (২৬ ফেব্রুয়ারি) সেনাপ্রধান যখন বেশ কড়া বক্তব্য দিয়েছিলেন, তখন আমি তার সামরিক উপদেষ্টাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তারা কি তাদের দিক থেকে কোনো অস্বাভাবিক বা উদ্বেগজনক কিছু অনুভব করছেন কি না। আমি বলেছিলাম যে সেনাপ্রধানের বক্তব্যটি তুলনামূলকভাবে স্পষ্ট এবং কঠোর মনে হয়েছে।’
সরজিস আরও লেখেন, ‘উত্তরে, তিনি (সামরিক উপদেষ্টা) আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কি সরাসরি এ বিষয়ে আলোচনা করতে চান?’ আমি বলি, ‘আমরা করতে পারি’। এরই ধারাবাহিকতায় সেদিন আমরা সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। সেনা ভবনের নির্ধারিত কক্ষে আমরা তিনজনই ছিলাম — সেনাপ্রধান, হাসনাত আর আমি।’
‘মানুষ হিসেবে, বিভিন্ন ব্যক্তি একজন ব্যক্তির মতামত বিভিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ ও ব্যাখ্যা করেন। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে, আমি সেদিনের বক্তব্যকে সরাসরি ‘প্রস্তাব’ হিসেবে দেখছি না, বরং ‘মতামতের স্পষ্ট প্রকাশ’ হিসেবে দেখছি,’ সরজিস লেখেন।
তিনি আরও বলেন, ‘মতামত প্রকাশ’ এবং ‘প্রস্তাব দেওয়া’র মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তবে, পূর্বের তুলনায় সেদিন সেনাপ্রধান আরও স্পষ্টভাষায় কথা বলেছেন।’
‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের জন্য ‘চাপ’ প্রসঙ্গে, আমি এটিকে চাপ প্রয়োগ হিসেবে দেখিনি। বরং তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছিলেন যে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ না হলে দেশের পরিস্থিতিতে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সৃষ্টি হবে,’ তিনি আরও বলেন।
সরজিস বলেন যে, হাসনাত আব্দুল্লাহর বক্তব্যে উল্লেখ করা অন্যান্য বিষয় — যেমন সাবের হোসেন, শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং সোহেল তাজের ভূমিকা — সেই বিষয়গুলোও বৈঠকে আলোচিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কি ফিরে আসবে, নির্বাচনে অংশ নিলে কী হবে, না নিলে কী হবে — এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন বর্জন করলে দল কখন ফিরে আসতে পারে, আদৌ ফিরে আসবে কিনা — এই বিষয়গুলোও আলোচনায় ছিল।
‘এই সমীকরণগুলো দেশের ওপর কি প্রভাব ফেলতে পারে, কি পর্যায়ের স্থিতিশীলতা বা অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে — এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে,’ সরজিস লেখেন।
হাসনাত উল্লেখ করা একটি নির্দিষ্ট কথোপকথন সম্পর্কে সরজিস সেই কথোপকথনের ঘটনা ঘটেছে বলে স্বীকার করেন, তবে স্পষ্ট করেন যে, এই কথোপকথন বৈঠক কক্ষের ভেতরে নয়, বরং বাইরে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শেষ হওয়ার পর ঘটেছিল।
‘গাড়িতে উঠার আগে, বিদায় জানাতে দাঁড়িয়ে থাকার সময় এই কথোপকথনটি হয়,’ তিনি আরও বলেন।
সরজিস এই পরিস্থিতিকে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব হিসেবে চিত্রিত করার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেন। ‘আমি 'হাসনাত বনাম ওয়াকার' বলার কোন কারণ দেখছি না। হাসনাতের অবস্থান আলাদা, আর সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের অবস্থানও আলাদা।’
‘জাতীয় নাগরিক পার্টি, অন্যান্য রাজনৈতিক দল বা জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করানো কখনোই প্রাসঙ্গিক নয়।’
তিনি কিছু দাবির সঙ্গে তার দলের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে বলেন, ‘কিছু কিছু স্থানে সেনাপ্রধানের পদত্যাগের কথা উঠছে, সেটা আমাদের বক্তব্য নয়।’
তারপর সরজিস সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগ সম্পর্কে বৃহত্তর চিন্তাভাবনা ব্যক্ত করে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা স্বাভাবিক ছিল — এবং তারা গোপনে এটা করেছেন।
তিনি বিশ্বাস করেন যে, সেনাপ্রধানের সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও, বিষয়টি অভ্যন্তরীণভাবে হ্যান্ডেল করা যেত।
‘আমরা আমাদের দলীয় ফোরামে সেগুলো বিস্তারিত আলোচনা করতে পারতাম, সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম এবং সেই অনুযায়ী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারতাম,’ তিনি বলেন।
অথবা, তারা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পরামর্শ করে এক সমন্বিত অবস্থান গড়ে তুলতে পারত এবং তারপর রাস্তায় নামতে পারত — যেমনটি তারা এখন করছেন, যে কোনো রূপের আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। অন্যান্য দল সম্মত না হলেও, তারা একটি দল হিসেবে স্বাধীনভাবে এই দাবি আদায়ের চেষ্টা করতে পারত।
তবে, হাসনাত যেভাবে এই আলোচনাগুলো প্রকাশ্যে আনলেন, সেটা সরজিস সমালোচনা করেন। কিনি বলেন, ‘এই কথাগুলো একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে যেভাবে আসলো, আমি এই প্রক্রিয়াটিকে যথাযথ মনে করি না। বরং এতে ভবিষ্যতে যেকোন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় আস্থার সংকট সৃষ্টি হতে পারে।’
হাসনাতের সঙ্গে তার মতবিরোধের কথা স্বীকার করে সরজিস লেখেন, ‘আমার বক্তব্যে আমার সহযোদ্ধা হাসনাতের বক্তব্যের সঙ্গে কয়েকটি ক্ষেত্রে মতবিরোধ হয়েছে। অনেকেই এর জন্য আমাকে সমালোচনা করতে পারেন, তবে আমি বিশ্বাস করি, আমাদের ব্যক্তিত্ব কখনোই স্রোতের বিপরীতে চলার মতো ছিল না। সেই কারণেই হাসিনা সরকারের বন্দুকের মুখে আমরা দাঁড়িয়েছিলাম।’
তিনি তার সহযোদ্ধাদের প্রতি প্রতিশ্রুতি দৃঢ় করে বলেন, ‘আজও হাসনাতের ওপর কেউ বন্দুক তাঁক করলে, তার সামনে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি আমাদের আছে। কিন্তু যখন আমি কোন সহযোদ্ধার কোন বিষয় আমার দৃষ্টিকোণ থেকে সংশোধন করার প্রয়োজন বোধ করব, তখন সেটাও আমি করব।’
তিনি তাদের ইতিহাসের কথা স্মরণ করে কোটা বিরোধী আন্দোলনের প্রাথমিক দিনগুলোতে তাদের ভূমিকার কথা মনে করিয়ে দেন।
‘সেই বিবেক থেকেই ৬ জুন, শহীদ মিনারে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কয়েকজন মানুষ যখন দাঁড়িয়েছিল, সেই প্রথম দিন আমরা সামনের সারিতে ছিলাম।’
সরজিস শেষ কথা হিসেবে আত্মসমালোচনা এবং বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্বাসের কথা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের এই বিবেক আমাদের সঠিক পথে রেখেছে এবং রেখে যাবে। আত্মসমালোচনার এই মানসিকতা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।’
তিনি তাদের অবিচল অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘জুলাই হত্যাকাণ্ড, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড যে 'যে কোন রূপের আওয়ামী লীগ' ঘটিয়েছে, তার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে।’
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.