বড়াইবাড়ীতে ভারতবিরোধী বিজয়: ১৮ এপ্রিলকে জাতীয় প্রতিরোধ দিবস ঘোষণার দাবি

কুড়িগ্রামের বড়াইবাড়ীতে ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বিরুদ্ধে বাংলাদেশের তৎকালীন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) ও গ্রামবাসীর প্রতিরোধকে ‘ঐতিহাসিক বিজয়’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ। এই দিনটিকে ‘জাতীয় প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা এবং ওই ঘটনায় শহীদ তিন বিডিআর সদস্যকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ প্রদানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

ছবি - সংগৃহীত

বুধবার (১৬ এপ্রিল ২০২৫) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘১৮ এপ্রিল ভারতীয় আগ্রাসন বিরোধী বড়াইবাড়ী দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবিতে’ আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে এসব দাবি উত্থাপন করা হয়।

সমাবেশে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের পক্ষ থেকে বড়াইবাড়ী যুদ্ধকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে একটি বিস্তারিত প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে:

• বড়াইবাড়ীতে শহীদ হওয়া তিন বিডিআর সদস্য - ল্যান্স নায়েক মো: ওয়াহিদুজ্জামান, সিপাহী মাহফুজুর রহমান ও সিপাহী আবদুল কাদেরকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাব প্রদান।
• যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী তৎকালীন বিডিআর অধিনায়ক শাহরুখ জামানকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাব প্রদান।
• প্রতিরোধে অংশ নেওয়া বড়াইবাড়ীর বাসিন্দা ডা. সাইফুল ইসলাম লাল মিয়া এবং প্রথম সংবাদদাতা মো: মিনহাজ আলীকে ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে ঘোষণা।
• যুদ্ধে জড়িত সকল সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে ঘোষণা করা।

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ২০০১ সালের সেই প্রতিরোধে গ্রামবাসীদের নেতৃত্বদানকারী ডা. সাইফুল ইসলাম লাল মিয়া। তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে বিএসএফ পাদুয়ায় বিডিআরের কাছে পরাজিত হয়ে প্রতিশোধ নিতে বড়াইবাড়ীতে হামলা চালায়। সেদিন ক্যাম্পে মাত্র ৯ জন বিডিআর সদস্য ছিলেন, বিপরীতে বিএসএফ সদস্য ছিল প্রায় ৫৫০ জন। আমরা গ্রামবাসী সেদিন দেশপ্রেম থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, একাত্তরের মতো যুদ্ধ করেছিলাম।’

তিনি অভিযোগ করেন, বিগত কোনো সরকার এই ঘটনাকে সেভাবে জনসমক্ষে তুলে ধরেনি। তিনি এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি ভারতের সীমান্তবর্তী প্রতিটি গ্রামের মানুষকে আত্মরক্ষার্থে রাইফেল ট্রেনিং দেওয়ারও দাবি জানান।

অনুপ্রবেশের প্রথম সংবাদদাতা মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘ভোর ৫টায় দেখি বিএসএফ গ্রামে ঢুকে পড়েছে। তাৎক্ষণিক বিডিআরকে জানাই। এরপরই যুদ্ধ শুরু হয়। আমি এবং এলাকার মানুষ বিডিআরের সঙ্গে ছিলাম।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘১৮ এপ্রিল একটি ঐতিহাসিক দিন, যা আমরা ভুলে গেছি। প্রতিনিয়ত বিএসএফ আমাদের ভাইদের গুলি করে, অথচ অন্য সীমান্তে তারা গুলি চালায় না। আমাদের নতজানু সরকারের কারণেই তারা নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ভারত শুধু একটি দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায়, জনগণ বা রাষ্ট্রের সঙ্গে নয়।

জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শামসুদ্দিন বলেন, ‘বড়াইবাড়ী গ্রাম রক্ষা করতে বিডিআর ও গ্রামবাসী যুদ্ধ করেছিলেন। শহীদদের জাতীয় বীর এবং আহতদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দিয়ে ভাতা প্রদান করতে হবে।’ তিনি অভিযোগ করেন, পূর্ববর্তী সরকার ভারতকে খুশি করতে গত বছর বড়াইবাড়ীর শহীদ মিনার বন্ধ রেখেছিল এবং দিবসটি পালনে বাধা দিয়েছিল। তিনি বড়াইবাড়ীর লড়াইয়ের ইতিহাস পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করারও দাবি জানান।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ইঞ্জিনিয়ার থোয়াই চিং মং শাক, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব মো. আবু হানিফ, সাংবাদিক শাখাওয়াত হোসেন ইবনে মঈন চৌধুরী, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সদস্য সচিব হাসান আরিফ, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইয়েদ কুতুব, সহকারী সদস্য সচিব গালিব ইহসান, আমজনতার দলের আরিফ বিল্লাহ, মুভমেন্ট ফর প্যালেস্টাইনের মো. হারুন অর রশীদ খান, সার্বভৌম আন্দোলনের শামীম রেজা, বিপ্লবী ছাত্রপরিষদের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান প্রমুখ। সমাবেশে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ ও বিপ্লবী ছাত্রপরিষদের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।