তারেক রহমান: শুধু সংস্কার নয়, জনগণের সমস্যা সমাধানে প্রস্তাব দিন

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মঙ্গলবার রাজনৈতিক দলগুলোকে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও প্রতিষ্ঠান সংস্কারের পাশাপাশি জনগণের সমস্যা সমাধানে জাতির কাছে প্রস্তাবনা পেশ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ছবি - সংগৃহীত

এক ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, সংবিধানের কাঠামো, ভোট ও নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা না করে, জনগণের সমস্যা কীভাবে সমাধান করা হবে সেদিকে বেশি জোর দেওয়া উচিত।’

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) রাজধানীর বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশন কনভেনশন হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মানে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে।

তারেক রহমানের মতে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণ, বাজার ব্যবস্থা এবং উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা ও প্রস্তাব থাকা উচিত। প্রায় ২০ কোটি মানুষের এই ঘনবসতিপূর্ণ দেশে জনগণের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে সে বিষয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক হওয়া উচিত। ‘কেন আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলছি না?’

তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনরুদ্ধারের জন্য আইন ও বিধি প্রণয়ন এবং একজন ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দুই মেয়াদের সীমাবদ্ধতা কি সংস্কার বলে বিবেচিত হবে? ‘বাজার ব্যবস্থার পরিবর্তন, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য কি সংস্কার প্রয়োজন নয়?’

রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের সেবা করার জন্য, বিএনপি নেতা বলেন, তাদের জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রতিও মনোযোগ দেওয়া উচিত।

‘উদাহরণস্বরূপ, দেশের বেশিরভাগ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। কেন রাজনৈতিক দলগুলো এই সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করছে না?’ তিনি প্রশ্ন করেন।

তারেক রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থার সংস্কার এবং উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে কীভাবে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে পণ্যের দাম রাখা হবে সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর জাতির কাছে পরিকল্পনা ও প্রস্তাবনা পেশ করা উচিত। ‘কেন আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করি না? জাতির সামনে এগুলো তুলে ধরা উচিত।’

তিনি স্বীকার করেন যে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ রয়েছে, তবে তাদের সাধারণ লক্ষ্য হলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা যেখানে মানুষ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করবে।

বিএনপি নেতা বলেন, তার দল অন্যান্য অনেক গণতান্ত্রিক দলের সঙ্গে জনগণের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন করেছে। ‘আমরা এই প্রচেষ্টায় সফল হয়েছি। কিন্তু, সংস্কার এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়।’

তারেক রহমান স্মরণ করিয়ে দেন যে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো ৩১ দফা সংস্কার রূপরেখা প্রণয়ন করে জাতির কাছে পেশ করেছিল। ‘আমরা প্রায় আড়াই বছর আগে এটি করেছিলাম, যখন অনেকেই সংস্কার নিয়ে কথা বলছিল না,’ তিনি বলেন।

তিনি বলেন, তারা রাষ্ট্র সংস্কার সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত ও প্রস্তাবকে স্বাগত জানায়, কারণ তারা দেশ ও জনগণের কল্যাণ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী। ‘সংস্কার নিয়ে বর্তমানে যে আলোচনা চলছে তা অবশ্যই প্রয়োজনীয়।’

বিএনপি নেতা বলেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রবর্তন, একজন ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মেয়াদের সীমাবদ্ধতা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনরুদ্ধারের পক্ষে-বিপক্ষে এখন আলোচনা চলছে। ‘আমরা বলেছি, জনগণের সমর্থনে সরকার গঠন করলে আমরা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী এই পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়ন করব।’

‘আসুন আমরা জনগণের সমস্যাগুলো নিয়ে চিন্তা করি এবং সেগুলো নিয়ে কথা বলি। এই বিষয়ে আমাদের কী সংস্কার রয়েছে তা তুলে ধরার চেষ্টা করি,’ তিনি বলেন।

তারেক রহমান স্বীকার করেন যে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের সমালোচনা করবে।

‘তবে, আমাদের এমন পরিস্থিতি তৈরি করা এড়িয়ে চলতে হবে যেখানে, একে অপরের সমালোচনায়, আমরা আমাদের জনগণ এবং দেশের সমস্যাগুলো সমাধান করতে ভুলে যাই, তুচ্ছ বিষয়গুলোকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলি। এটি ঘটলে, এই দেশের সম্ভাবনা নষ্ট হবে,’ তিনি সতর্ক করে দেন।

তিনি বলেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের জন্যও সংস্কার অপরিহার্য। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যদি আমরা একটি সঠিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হই, তাহলে কীভাবে আমরা এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব? কীভাবে আমরা একটি সমৃদ্ধ জাতি গড়ে তুলতে পারব?’

বিএনপি নেতা বলেন, প্রতিটি দলের জনগণকে শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের জন্য তাদের পরিকল্পনা ও প্রস্তাব সম্পর্কে অবহিত করা উচিত। "আমরা একটি উৎপাদনমুখী শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে, তবে সম্ভবত আমাদের এর বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া উচিত।"

তারেক রহমান আরও বলেন, দেশ গুরুতর পরিবেশগত হুমকির সম্মুখীন হওয়ায় পরিবেশ দূষণ মোকাবেলায় রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করা জরুরি।

‘আমি বিশ্বাস করি যে পরিবেশ সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাব এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ এবং অন্যান্য ধরণের দূষণের কারণে, শিশু সহ লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। রাজধানীসহ পুরো দেশকে এই দূষণ থেকে রক্ষা করার আমাদের পরিকল্পনা সকল রাজনৈতিক দলের জাতির কাছে উপস্থাপন করা উচিত,’ তিনি বলেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শিল্পায়নের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি, নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট মোকাবেলার মতো বিষয়গুলোতেও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়টি উত্থাপন করা উচিত।

এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, তারেক রহমানের রাজনৈতিক উপদেষ্টা মাহদী আমিন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু এবং নাগরিক ঐক্য নেতা শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।