দশ বছর ধরে আটকে থাকা পানি প্রকল্পে অসন্তোষ প্রধান উপদেষ্টার

দীর্ঘ দশ বছর ধরে দুটি ভূপৃষ্ঠের পানি প্রকল্পের কাজ আটকে থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার ঢাকায় এক সভায় তিনি বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত উত্তোলনের ফলে দেশের পরিবেশ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

ছবি - সংগৃহীত

‘আমরা প্রতিদিন ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে পরিবেশকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছি। এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় থাকা সত্ত্বেও এত বছর ধরে এই কাজ সম্পন্ন হয়নি,’ তিনি বলেন।

‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ প্রকল্প পর্ব-৩’ এবং ‘মেঘনা নদী সুরক্ষা মহাপরিকল্পনা প্রকল্প’-এর অগ্রগতি জানতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগ, ঢাকা ওয়াসা, পরিকল্পনা কমিশন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের (ডিওই) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক লমিয়া মোরশেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া।

দশ বছর ধরে দুটি প্রকল্পের কাজ আটকে থাকায় অধ্যাপক ইউনূস অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প প্রায় ১০ বছর ধরে আটকে আছে! এটা ঢাকা শহরের মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে এই দুটি প্রকল্পের শুরু থেকেই কোথায় কোথায় বাধা ছিল তা খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। প্রকল্পের ব্যয় কমানোর বিষয়টিও তিনি আলোচনা করেন।

কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা শহরের মোট পানি সরবরাহের প্রায় ৭০ শতাংশ আসে ভূগর্ভস্থ পানির উৎস থেকে। দীর্ঘদিন ধরে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ফলে ঢাকায় প্রতি বছর পানির স্তর প্রায় ২-৩ মিটার করে কমছে, যা টেকসই উন্নয়নের পরিপন্থী এবং বড় ধরনের পরিবেশগত বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করছে।

এই সংকট মোকাবেলায় 'সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প (পর্ব-৩)' থেকে মেঘনা নদীর পানি শোধন করে নগরবাসীর জন্য একটি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পানি সরবরাহ ব্যবস্থা স্থাপনের লক্ষ্যে মেঘনা নদী সুরক্ষা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানান।

জার্মানি, ফ্রান্স, ডেনমার্ক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই প্রকল্পে সহায়তা করছে। ইইউ এবং অন্যান্য বিদেশি দাতা সংস্থাগুলি প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখার এবং ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে তাদের সহায়তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

মেঘনা নদী সুরক্ষায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি ১০ বছর আগে শুরু হয়েছিল। যদিও মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে, এর বাস্তবায়ন কাজ এখনও শুরু হয়নি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি অতিরিক্ত দূষণের কারণে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এবং দেশের অন্যান্য নদীও নানা সংকটে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, মেঘনা নদী রক্ষা করা সরকারের অগ্রাধিকার বলে তিনি জানান।

মেঘনা নদী নিয়ে অনেক উদ্বেগ রয়েছে এবং সে কারণেই নদীটি রক্ষায় তাৎক্ষণিকভাবে কাজ শুরু করা উচিত বলে অধ্যাপক ইউনূস মন্তব্য করেন।

‘বাংলাদেশের নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করা সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। অন্যথায়, এই অঞ্চলের মানুষের জীবন রক্ষা করা যাবে না,’ তিনি বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সরকারি কাজ সম্পন্ন করে চলতি অর্থবছরের মধ্যেই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। এছাড়াও, জাতীয় নদী সংরক্ষণ কমিশনকে কীভাবে আরও সক্রিয় করা যায় এবং পরিবেশ অধিদপ্তর ও কমিশনের মধ্যে সমন্বয় কীভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়েও তিনি আলোচনা করেন।