গভীর সঙ্কটে দক্ষিণ কোরিয়া, এবার অভিশংসনের মুখে প্রধানমন্ত্রী

দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী হ্যান ডাক সু অভিশংসনের ভোটের মুখোমুখি হয়েছেন। প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি তাকে অভিশংসনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে আরও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত হতে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। খবর বিবিসি ও আল জাজিরার।

দুই সপ্তাহও পার হয়নি, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়ল অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী হ্যান ডাক সু।

ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ইউন গত ৪ ডিসেম্বর দেশে স্বল্প সময়ের জন্য সামরিক শাসন জারি করেই সবার তোপের মুখে পড়েছিলেন। সেই তোপই গড়িয়েছে অভিশংসনে।

বিরোধীদল ডেমোক্রেটিক পার্টির (ডিপি) অভিযোগ, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউনের অপকর্মের দোসর ছিলেন। তাই তাকেও পার্লামেন্টে অভিশংসনের পরীক্ষা দিতে হবে।

মূলত, পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট ইউনকে অভিশংসিত করা হলেও তাকে প্রেসিডেন্সি থেকে সরাতে সাংবিধানিক আদালতের রুলিং লাগবে। অন্তত ৬জন বিচারপতির সমর্থন লাগবে তাতে। অথচ, দেশটির সুপ্রিম কোর্টে ৯ বিচারপতির জায়গায় বর্তমানে রয়েছেন ৬ জন।

চলতি বছরের শুরুতে তিনজন বিচারপতি মেয়াদ শেষে অবসরে যাওয়ায় তিনটি পদ খালি রয়েছে। ওই তিন পদে প্রধানমন্ত্রী হ্যানকে নতুন বিচারক নিয়োগ দিতে চাপ দিচ্ছিলেন ডিপির নেতারা।

তবে তাতে রাজি হয়নি হ্যানের পিপলস পাওয়ার পার্টি (পিপিপি)। হানের দল যুক্তি দিচ্ছে, কেবলমাত্র একজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টই সাংবিধানিক আদালতে বিচারপতি নিয়োগদানের কর্তৃত্ব রাখেন।

প্রেসিডেন্সি থেকে ইউনকে সরাতে বর্তমানে থাকা ছয়জন বিচারপতিকেই সর্বসম্মত ঐকমত্যে আসতে হবে। সেই সম্ভাবনা নিয়ে আশঙ্কা থাকায় হ্যানকে চাপ দিচ্ছিল ডেমোক্রেটিক পার্টি। তাতে রাজি না হওয়ায় এবার হ্যানের বিরুদ্ধে অভিশংসনে ওঠেপড়ে লেগেছে দলটি।

এদিকে যদিও একজন প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করতে জাতীয় পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন। একজন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রেও একই শর্ত প্রযোজ্য কিনা সে বিষয়েও কোন ঐকমত্য নেই।

হ্যানের দল পিপিপি যুক্তি দিয়েছে, অবশ্যই দুই-তৃতীয়াংশ আইন প্রণেতাদের হ্যানের অভিশংসন অনুমোদন করতে হবে। অন্যদিকে, ডিপি দাবি করছে, পার্লামেন্টের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ১৫১ জন আইনপ্রণেতা অভিশংসন সমর্থন করলেই, সংবিধানে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে মন্ত্রিসভার সদস্যদের অপসারণের বিধান রয়েছে।

তবে দুই-তৃতীয়াংশের থ্রেশহোল্ডে পৌঁছানোর জন্য ডিপিকে নিজেদের ১৭০ আসন, ছোট দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে ১৯২টি আসন থাকার কারণে আরও কমপক্ষে আটজন পিপিপি আইনপ্রণেতার সমর্থন লাগবে।

হ্যান অভিশংসিত হলে উপ-প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী চোই সাং-মোক প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন।