জিম্বাবুয়ের গল্পটা হৃদয়বিদারক

বিশ্বকাপ বাছাইয়ে স্কটল্যান্ড বনাম জিম্বাবুয়ের ম্যাচের পর কোনটা নিয়ে আগে লেখা যায়? জিম্বাবুয়ের অবিশ্বাস্য পরাজয় নাকি স্কটল্যান্ডের রূপকথার উত্থান। আগে না হয় জিম্বাবুয়ের গল্পটাই লিখি। সুপার সিক্সের প্রথম তিন ম্যাচের তিনটিতে জিতেছে দলটি। এর আগে গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচসহ টানা পাঁচটি ম্যাচ জিতেছে ক্রেইগ আরভীনের দল। ভারত বিশ্বকাপের একটি টিকিটের সবচেয় বড় দাবিদার তখন জিম্বাবুয়েকেই ভেবেছিল অনেকে।

স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রিস সোলের বল বোল্ড হয়ে যান জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভীন

সুপার সিক্সের শেষ দুই ম্যাচের যে কোনো একটিতে জিতলেই ২০২৩ বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত হয়ে যেত জিম্বাবুয়ের। কিন্তু শ্রীলঙ্কার পর আজ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেও হেরে বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে সিকান্দার রাজা, আরভীন ও শন উইলিয়ামসদের। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর ২০২৩ বিশ্বকাপেও দর্শক হয়ে থাকতে হচ্ছে জিম্বাবুয়েকে।

ইতোমধ্যেই ২০২৩ বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে ফেলেছে শ্রীলঙ্কা। আগামী ৬ জুলাই স্কটল্যান্ডের মুখোমুখি হবে নেদারল্যান্ডস। এই ম্যাচে স্কটল্যান্ড জিতলে কোনো রানরেটের হিসেব-নিকেশ ছাড়াই তারা পেয়ে যাবে ভারত বিশ্বকাপের টিকিট। অন্যদিকে নেদারল্যান্ডস জিতলেও নির্দিষ্ট বড় ব্যবধানে হারাতে হবে স্কটিশদের। ৪ ম্যাচ শেষে ৬ পয়েন্ট স্কটল্যান্ডের। সমান ম্যাচে ৪ পয়েন্ট সংগ্রহ নেদারল্যান্ডসের। নেদারল্যান্ডসের নেট রানরেট (-০.০৪২)। স্কটল্যান্ড সেখানে অনেকটাই এগিয়ে। তাদের নেট রানরেট (+০.২৯৬)।

বিশ্বকাপ বাছাইয়ের টানা ৫ ম্যাচ জেতার পর শেষ দুটি ম্যাচে জিম্বাবুয়ের পরাজয় মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০১৮ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের কথা। সেবারও শুরু থেকে কী দুর্দান্ত ক্রিকেটেই না খেলছিল দলটি। প্রথম ৫ ম্যাচের চারটিতে জয়, একটিতে টাই। সেবারও দুটি ম্যাচের একটি জিতলেই বিশ্বকাপের টিকিট হাতে পেয়ে যেত জিম্বাবুয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের, শেষ দুটি ম্যাচে উইন্ডিজ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিপক্ষে হেরে স্বপ্নভঙ হয়েছিল রাজা-উইলিয়ামসদের। এবারও সেই দুঃস্বপ্ন ফিরে এলো। টানা পাঁচ ম্যাচ জয়ের পর শেষ দুটি ম্যাচে হার। তাতে বিদায়ঘণ্টা বেজে উঠলো জিম্বাবুয়ের।

স্কটল্যান্ড রূপকথার গল্পটা শুরু আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নিজেদের প্রথম ম্যাচে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে আইরিশদের ১ রানে হারায় স্কটিশরা। পরের দুই ম্যাচে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারিয়ে সুপার সিক্স নিশ্চিত করে দলটি। সুপার সিক্সে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উইন্ডিজকে হারিয়ে দেয় স্কটল্যান্ড। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আজ ছিল বাঁচা-মরার লড়াই। সে লড়াইয়ে শেষপর্যন্ত জয়ী হয়েছে স্কটল্যান্ড।

বুলাওয়েতে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে স্কোরকার্ডে ২৩৪ রান জমা করে স্কটল্যান্ড। জবাবে ৪১.১ ওভারে ২০৩ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। ৩১ রানের জয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন ক্রিস সোল।

মাঝারি লক্ষ্যটা জিম্বাবুয়ে কঠিন করে তোলে ইনিংসের শুরুতেই উইকেট হারিয়ে। দলীয় ৩৭ রানের মধ্যে টপঅর্ডারের চারজন ব্যাটারকে হারিয়ে চাপে পরে আরভীনের দল। দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটার উইলিয়ামস আউট হয়েছেন ১২ রান করে। গুরুত্বপূর্ণ দুটি ম্যাচে পারফর্ম করতে ব্যর্থ হলেন তিনি।

পঞ্চম উইকেটে রায়ান বার্লকে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন আরেক ইনফর্ম ব্যাটার রাজ। কিন্তু জিম্বাবুইয়ান অলরাউন্ডারও ফিরেছেন বড্ড অসময়ে। ৪০ বলে ৩৪ রান করে দলীয় ৯১ রানের মাথায় আউট হন রাজা।

এরপর বার্লকে সঙ্গ দেন মাদভেরে। তাদের জুটিতে ওঠে ৭১ রান। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচটি একবার জিম্বাবুয়ের দিকে হেলেছে তো পরক্ষণই স্কটল্যান্ডের দিকে হেলেছে। দলকে ১৬৪ রানে রেখে মাদভেরে ফিরেছেন ৩৯ বলে ৪০ রান করে।

ছয় উইকেট হারানোর পরও একাই লড়াইটা চালিয়ে যান বার্ল। মিচেল লিস্কের করা ৩৯তম ওভারে পরপর দুই বলে চার আর ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচে উত্তেজনা ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু চতুর্থ বলটাকে সিমানা ছাড়া করতে গিয়ে মিড উইকেটে ধরা পড়েন তিনি। ৮৩ রানে শেষ হয় তার লড়াই। তার আউটেই কার্যত ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় জিম্বাবুয়ের। স্কটল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নিয়েছেন সোল। দুটি করে উইকেট পেয়েছেন ব্রেন্ডন ম্যাকমুলান ও লিস্ক।

এর আগে মিচেল লিস্কের সর্বাচ্চ ৪৮ রানের ওপর ভর করে দুইশ ছাড়ানো স্কোর দাঁড় করায় স্কটল্যান্ড। জিম্বাবুইয়ান বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কোনোট স্কটিশ ব্যাটার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেছেন ম্যাথু ক্রস। এছাড়া ক্রিস্টোফার ম্যাকব্রিড ২৮ এবং জর্জ মানসি ৩১ রান করেন। জিম্বাবুয়ের হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নিয়েছেন উইলিয়ামস। দুটি উইকেট পেয়েছেন টেন্ডাই চাতারা।