অপবাদ ঘুচল না দক্ষিণ আফ্রিকার

আইসিসির টুর্নামেন্টের নক আউট পর্বে এসে খেই হারিয়ে ফেলা দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য নতুন কিছু নয়। স্বভাবসুলভ এই বৈশিষ্ট্যের কারণে তাদের বলা হয় চোকার্স। এবারের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বদনাম ঘোচানোর সুযোগ ছিল প্রোটিয়াদের। কিন্তু ইতিহাসের দুষ্টচক্র থেকে এবারও বের হতে পারল না আফ্রিকানরা।

রান বন্যার ম্যাচ শেষে নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা সৌজন্যতা বিনিময় করেন। ছবি: আইসিসি

আজ বুধবার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৫০ রানের বড় ব্যবধানে হেরে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। হাই স্কোরিং ম্যাচ জিতে কিউইরা উঠে গেল টুর্নামেন্টের ফাইনালে। আগামী রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের প্রতিপক্ষ এশিয়ান জায়ান্ট ভারত।

লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে রাঁচিন রবিন্দ্র ও কেন উইলিয়ামসনের সেঞ্চুরির ওপর দাঁড়িয়ে নির্ধারিত ওভারে ছয় উইকেটে ৩৬২ রানের পাহাড় গড়ে নিউজিল্যান্ড। যা চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। জবাব দিতে নেমে নয় উইকেটে ৩১২ রান তুলতে সক্ষম হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।

বিফলেই গেল ডেভিড মিলারের বিস্ফোরক সেঞ্চুরিটা। তিনি ম্লান হয়ে গেলেন দলের হারে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি করা রবিন্দ্র হয়েছেন ম্যাচ সেরা। বিস্ময়করভাবে তার সবকটি সেঞ্চুরিই আইসিসির টুর্নামেন্টে! ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচটি শতক আইসিসির ইভেন্টে করেছেন এমন ক্রিকেটার রবিন্দ্রই প্রথম।

১০১ বলে ১০৮ রানে আউট হন নিউজিল্যান্ড ওপেনার। কেন উইলিয়ামসন ৯৪ বলে করেন ১০২ রান। পরে ঝড় ওঠে ডারিল মিচেল ও গ্লেন ফিলিপসের ব্যাটে। মিচেল ৩৭ বলে ৪৯ রানে আউট হন। ২৭ বলে ৪৯ রানে অপরাজিত থাকেন ফিলিপস। এ ছাড়া ওপেনার উইল ইয়ং ২১ ও মিচেল ব্রেসওয়েল ১৬ রান করেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন লুঙ্গি এনগিডি। দুটি শিকার আরেক পেসার কাগিসো রাবাদার। অন্য উইকেটটি পেয়েছেন উইয়ান মুলডার। বোলাররা লক্ষ্যমাত্রা নাগালে রাখতে পারেননি। ব্যাটাররাও পারেননি অবিশ্বাস্য কিছু করতে। তবে কিছুটা লড়াইয়ের আভাস দিয়েছিলেন প্রোটিয়া ব্যাটাররা।

পাহাড়সম লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০ রানে রায়ান রিকেলটনের উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় উইকেটে ১০৫ রানের জুটিতে ধাক্কা সামলে ওঠে প্রোটিয়ারা। জুটি গড়েন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ও রাসি ফন ডার ডুসেন। দুজনই পেয়েছেন ব্যক্তিগত ফিফটি। বাভুমা ৭১ বলে ৫৬ এবং ডুসেন ৬৬ বলে ৬৯ রান করেন।

দুজনকেই বিদায় করেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ও অলরাউন্ডার স্যান্টনার। বাভুমা ও ডুসেনের বিদায়ে ম্যাচ ঝুঁকে পড়ে কিউইদের দিকে। কারণ, পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে ব্যাটিং করতে না পারায় আস্কিং রেটের চাপে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। চাপ সামলানোর চেষ্টা করেন মিলার। ৬৭ বলে ১০০ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন তিনি।

মিলারের ইনিংসটা অবশ্য কোনো কাজে আসেনি। শুধু হারের ব্যবধান কমাতে পেরেছে মাত্র। এ ছাড়া রিকেলটন ১২ বলে ১৭, এইডেন মার্করাম ২৯ বলে ৩১ ও রাবাদা ২২ বলে ১৬ রানে আউট হন। প্রোটিয়াদের জন্য সান্ত্বনা অলআউট এড়াতে পেরেছে তারা। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে তিন উইকেট নেন অধিনায়ক স্যান্টনার।

দুটি করে শিকার ম্যাট হেনরি ও ফিলিপসের। তবে রেকর্ড সেঞ্চুরির সুবাদে ম্যাচ সেরা হয়েছেন রবিন্দ্র। এই জয়ে দীর্ঘ দেড় শতক পর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে উঠল নিউজিল্যান্ড।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউজিল্যান্ড: ৩৬২/৬ (৫০ ওভার)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩১২/ (৫০ ওভার)।
ফল: নিউজিল্যান্ড ৫০ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: রাঁচিন রবিন্দ্র (নিউজিল্যান্ড)।