নতুন স্পাইওয়্যার খুঁজছে ভারত সরকার!

ভিন্ন মতাবলম্বী রাজনীতিক ও সমালোচকদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ও এনক্রিপটেড মেসেজে আড়ি পাততে নতুন স্পাইওয়্যার খুঁজছে ভারত সরকার। ইসরায়েলের এনএসও গ্রুপের প্রস্তুতকৃত পেগাসাস সফটওয়্যার নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিতর্ক শুরুর পর ভারত পেগাসাসের বিকল্প খুঁজছে। বিভিন্ন দেশের প্রায় এক ডজন সফটওয়্যার প্রস্তুতকারক কোম্পানি শীঘ্রই এ সংক্রান্ত দরপত্রে অংশ নিতে পারে। খবর ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

এনএসও গ্রুপের পেগাসাস স্পাইওয়্যার নিয়ে বিতর্কের জেরে ভারত নতুন বিকল্প খুঁজছে

ভারতের প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এখন এনএসও গ্রুপের স্বল্প পরিচিত প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছ থেকে নজরদারি সফটওয়্যার কিনতে আগ্রহ বোধ করছেন। নতুন স্পাইওয়্যারের চুক্তির জন্য তারা ১২ কোটি ডলার পর্যন্ত খরচ করতে চাইছেন।

এ সংক্রান্ত আলোচনা সম্পর্কে অবগত দুটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহগুলোতে প্রায় এক ডজন কোম্পানি নতুন স্পাইওয়্যার সরবরাহে ভারত সরকারের আহূত দরপত্রে অংশ নিতে পারেন।

ভারত সরকার পেগাসাস সফটওয়্যার কেনার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি। তবে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে সাংবাদিক, বাম মতাবলম্বী শিক্ষাবিদ ও সরকারবিরোধী রাজনীতিকদের সেলফোনে পেগাসাস ম্যালওয়্যার পাওয়া গেছে। একাধিক মানবাধিকার সংস্থার উদ্যোগে রাহুল গান্ধীসহ কয়েকজন রাজনীতিক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীর সেলফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা চালিয়ে পেগাসাসের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল দুজন কর্মকর্তা জানান, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্যোগে পরিচালিত ফরেনসিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ভারত সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। অ্যাপল ও হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ টার্গেটকৃত ইউজারদের বিভিন্ন সময়ে তাদের ডিভাইসে ম্যালওয়্যারের উপস্থিতি সম্পর্কে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। এ বিষয়টিও ভারত সরকারকে জনসমক্ষে বিব্রত করেছে।

ভারত এমন সময়ে নতুন স্পাইওয়্যারের খোঁজে নেমেছে যখন যুক্তরাষ্ট্র সরকার ক্রমশ লাভজনক হয়ে ওঠা এ শিল্পকে জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি অভিহিত করে দমনের ঘোষণা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার ও নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘনে ব্যবহৃত সফটওয়্যারের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ বিষয়ে এক নির্বাহী আদেশ জারি করে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ভিন্ন মতাবলম্বী, অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিকদের টার্গেট করতে বাণিজ্যিক সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনে সহায়তার জন্য নিজেদের পণ্য বিক্রি করে যেসব কোম্পানি, তাদের সমর্থনের জন্য মার্কিন করদাতাদের অর্থ ব্যয় করা যাবে না।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফরেনসিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কমপক্ষে ৫০ কর্মকর্তার সেলফোন স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে হ্যাক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১০টি দেশে মার্কিন দূতাবাসে কর্মরতরাও রয়েছেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন। ফরেনসিক পরীক্ষার ফলাফল জানার পরই মার্কিন সরকার নতুন নির্বাহী আদেশ জারি করেছে বলে তিনি জানান।

স্পাইওয়্যার কেনার ভারতীয় প্রয়াস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো জানিয়েছে,দিল্লির কর্মকর্তারা গ্রিসভিত্তিক ইন্টেলেক্সা থেকে ম্যালওয়্যার সংগ্রহের কথা ভাবছেন। গ্রিসে সদরদপ্তর হলেও ইন্টেলেক্সায় রয়েছেন এমন কিছু কর্মকর্তা, যারা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জন্য প্রিডেটর নামের সফটওয়্যার তৈরি করেছিলেন। এছাড়া ইসরায়েলি কোম্পানি কোয়াড্রাম ও কগনাইটের কথাও সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য কোয়াড্রাম ও ইন্টেলেক্সার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। কগনাইটের সঙ্গে যোগাযোগ হলেও মন্তব্যের জন্য তারা সাড়া দেয়নি। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।