সাগরতলে বিশ্বের দীর্ঘতম টানেল: ডেনমার্ক-জার্মানি মিলবে ২০২৯ সালে

ইউরোপের পরিবহন ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে চলছে বিশাল প্রকৌশল প্রকল্পের কাজ। সাগরতলে নির্মাণাধীন ফেমার্নবেল্ট টানেল ডেনমার্ক ও জার্মানিকে সংযুক্ত করবে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে এটি বিশ্বের দীর্ঘতম সড়ক ও রেল টানেল এবং সবচেয়ে দীর্ঘ নিমজ্জিত টানেল হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। খবর এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় আন্ডারসি টানেল

১৮ কিলোমিটার (১১.২ মাইল) দীর্ঘ এই টানেলে থাকবে দুটি সড়ক পথ ও দুটি বৈদ্যুতিক রেললাইন। ঐতিহ্যগতভাবে শক্ত মাটি খুঁড়ে টানেল নির্মাণ করা হলেও ফেমার্নবেল্ট টানেল নির্মিত হচ্ছে প্রিফ্যাব্রিকেটেড কংক্রিট সেকশন ব্যবহার করে। এই বিশাল সেকশনগুলো সাগরতলে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, একসঙ্গে যুক্ত করা হবে এবং পরবর্তীতে ডুবিয়ে দেওয়া হবে। প্রতিটি সেকশন ২১৭ মিটার দীর্ঘ, ৪২ মিটার প্রস্থ এবং ৯ মিটার গভীর। প্রতিটি সেকশনের ওজন প্রায় ৭৩ হাজার টন, যা ১০টি আইফেল টাওয়ারের সমান।

গত ফেব্রুয়ারিতে ডেনমার্কের রডবিহাভনে একটি ফ্যাক্টরিতে প্রথম প্রিফ্যাব্রিকেটেড কংক্রিট সেকশন প্রস্তুত হয়েছে, যা প্রকল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। রডবিহ্যাভন ও পুটগার্ডেনের টানেল পোর্টাল নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলছে। ২০২৯ সালের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

৭.৪ বিলিয়ন ইউরো (৭.৭ বিলিয়ন ডলার) ব্যয়ে নির্মিত হতে যাওয়া এই টানেল শুধু পরিবহন দক্ষতা বৃদ্ধিই করবে না, পর্যটন খাতেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে দর্শনার্থীদের জন্য আরো সুবিধাজনক প্রবেশাধিকার প্রদান করবে।

বর্তমানে ডেনমার্ক ও জার্মানির মধ্যে ফেরিতে ৪৫ মিনিট সময় লাগে। টানেল চালু হলে গাড়িতে মাত্র ১০ মিনিট এবং ট্রেনে ৭ মিনিটে এই দূরত্ব পাড়ি দেওয়া যাবে। হামবুর্গ ও কোপেনহেগেনের মধ্যে বর্তমান ভ্রমণের সময় অর্ধেক হয়ে যাবে, যা যাত্রী ও মাল পরিবহনের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।

ভিজিটডেনমার্কের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট ডিরেক্টর ম্যাডস শ্রেইনার মনে করেন, এই টানেল স্ব-ড্রাইভ পর্যটন, সাপ্তাহিক ছুটি এবং পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ যেমন সাইক্লিং ও ট্রেন পর্যটনে উৎসাহ জোগাবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফেমার্নবেল্ট টানেল শুধুমাত্র ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি বিস্ময় হবে না, বরং এটি ইউরোপীয় পরিবহন পরিকাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল হিসেবে কাজ করবে, যা মহাদেশজুড়ে মানুষ ও পণ্যের চলাচলকে আমূল পরিবর্তন করবে।