চারজাতি সুপার সিরিজ: রমিজ রাজার ৬৫০ মিলিয়ন ডলার প্রজেক্ট

বছর পাঁচেক আগে ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার জোটবদ্ধ আর্থিক মডেল ‘বিগ থ্রি’ কাঁপিয়ে দিয়েছিল বিশ্ব ক্রিকেট। অর্থ ও ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় তিন দেশের উদ্যোগ বিগ থ্রি রীতিমতো আতঙ্ক হয়ে গিয়েছিল।

রমিজ রাজা

চলতি বছরের শুরু থেকে ক্রিকেটাঙ্গনে অস্ফুট স্বরে বাজছে ‘বিগ ফোর’র ধ্বনি। দুবাইয়ে চলমান আইসিসির মিটিংয়ে প্রস্তাবটা পাস হয়ে গেলেই নতুন জোট আত্মপ্রকাশ করবে। নতুন এই জোটের উদ্যোক্তা পাকিস্তান।

পিসিবির (পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড) সভাপতি হওয়ার পর থেকে সাবেক ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজা নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হচ্ছেন। বিগ ফোরও তার মস্তিষ্ক থেকেই জন্ম নিয়েছে। পাকিস্তান, ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে বিগ ফোর গঠনের চেষ্টা করছেন রমিজ রাজা। চার দেশকে মোটা অঙ্কের আয়ের রাস্তা দেখাচ্ছেন তিনি।

এখন কেবল আইসিসি আয়োজিত কোনো ইভেন্টেই মুখোমুখি হয় ভারত পাকিস্তান

আইসিসির মিটিংয়ে চারজাতি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের প্রস্তাব দেওয়ার কথা পিসিবি সভাপতির। গত জানুয়ারিতেই এই প্রস্তাব সম্পর্কে প্রকাশ্যে কথা বলেছিলেন তিনি।

টি-টোয়েন্টি সুপার সিরিজ নাম হতে পারে টুর্নামেন্টের। যে টুর্নামেন্ট নাকি ৬৫০ মিলিয়ন ডলার আয় এনে দেবে। আগামী সেপ্টেম্বরে-অক্টোবরে হতে পারে এই টুর্নামেন্ট। ইতোমধ্যে নাকি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া মৌখিক সম্মতি দিয়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, সবার জন্যই আসলে এটি লোভের প্রস্তাব। ৬৫০ মিলিয়ন ডলার তথা ৫ হাজার কোটি রুপি আয় হবে এই টুর্নামেন্ট থেকে। সমান ভাগ হলে সবার আয়ও নেহায়েত কম হবে না।

ডাবল লিগ পদ্ধতির টুর্নামেন্ট হবে, প্রত্যেক দল অন্তত ৬টি ম্যাচ খেলবে। তারপর সেরা দুই দলকে নিয়ে ফাইনাল। আবার বিকল্প ভাবনাও আছে, দর্শকদের বিনোদন দিতে সেরা দুই দলকে নিয়ে বেস্ট অব থ্রি ম্যাচের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ করা হতে পারে।

মূলত, প্রতিবেশী ও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সঙ্গে নিয়মিত খেলার জন্য পাকিস্তানের এত চেষ্টা। ২০১২ সালের পর থেকে রাজনৈতিক কারণে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বন্ধ পাকিস্তানের। নিকট ভবিষ্যতে তাদের সিরিজ হওয়ার সুযোগ কম। গত ১০ বছরে এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপেই শুধু তাদের সাক্ষাত হয়েছে।

তাই ভারতের বিরুদ্ধে নিয়মিত সিরিজ খেলার সুযোগ তৈরি করতেই রমিজ রাজা নতুন টোপ ফেলেছেন সুপার সিরিজ দিয়ে। এবং এই টুর্নামেন্টকে পাকাপাকি রূপ দিতে আইসিসিকে যুক্ত করার প্রস্তাবও থাকছে। টুর্নামেন্টের আয়োজনের ভার আইসিসিকেই দিতে চায় পিসিবি। তবে রোটেশন অনুযায়ী অংশগ্রহণকারী সব দেশই স্বাগতিক হওয়ার সুযোগ পাবে।

ভারতের সঙ্গে খেলার লোভ হওয়াটা অমূলক নয় রমিজ রাজার জন্য। কারণ দুই দেশের লড়াই ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম আকর্ষনীয় বিনোদন। মরুর বুকে গত বছর অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই যার জলজ্যান্ত উদাহরণ। দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের সুপার টেন পর্বেও গ্রুপ ম্যাচে ভারত-পাকিস্তান সবচেয়ে বেশি ভিউয়ারশিপ পেয়েছে। দর্শকপ্রিয়তার দিক থেকে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের ফাইনালও পাত্তা পায়নি পাক-ভারত ম্যাচের কাছে। যে ম্যাচে বাবর আজমের দল হারিয়েছিল কোহলির ভারতকে।

তবে দ্বিপাক্ষিক লড়াই বিবেচনায় সীমিত ওভারের দুই ফরম্যাটের পরিসংখ্যানে পাকিস্তানই স্বস্তিদায়ক অবস্থানে আছে। উপমহাদেশের দুই বড় ক্রিকেট পরাশক্তি এখন পর্যন্ত ১৩২ ওয়ানডে, ৯টি- টোয়েন্টি খেলেছে। ওয়ানডেতে পাকিস্তান ৭৩ ম্যাচ জিতেছে। বিপরীতে ভারত ৫৫ ম্যাচে জয় পেয়েছে। চার ম্যাচে ফলাফল হয়নি। টি-টোয়েন্টিতে ভারত ৭টি, পাকিস্তান ২টি জয় পেয়েছে।

পাক-ভারত ক্রিকেটের মেলা এখন কদাচিৎ দেখা যায়। নতুন আঙ্গিকে দুই দেশের রোমাঞ্চকর লড়াই আয়োজনের চেষ্টা করছে পিসিবি। যেখানে অর্থের ঝনঝনানিও বাজাছে। ভারত এই ফাঁদে পা দিলেই আইসিসিও সুপার সিরিজের অনুমোদন দিয়ে দেবে বলে আশা করা যায়। অপেক্ষা এখন আইসিসির মিটিং থেকে কী খবর আসে।