তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পিছনের খবর

গতকাল শুক্রবার রাতে তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থানের খবর চাউর হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে দেশের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিদ্রোহী সেনাদের হাতে বলেই ধারণা করছিলো সবাই। কিন্তু সকাল হওয়ার সাথে সাথেই পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টাতে শুরু করে। যাদুমন্ত্রের মতো পরিস্থিতি এরদোগানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

সেনা অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর দেশটির রাজধানী আংকারা আর সবচেয়ে বড় নগরী ইস্তাম্বুলের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বিদ্রোহী সেনাদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছিলো। সেনারা অভ্যুত্থানের প্রথম ধাপেই সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দখল করে নেয় এবং স্বাভাবিক সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়।

ঠিক এমন সঙ্কটময় মুহূর্তে যাকে সবচেয়ে বেশি দরকার ছিলো তিনি হলেন, দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান। কিন্তু তাকেই পাওয়া যাচ্ছিলো না। বলা হচ্ছিলো, প্রেসিডেন্ট সেই সময় একটি অবকাশ কেন্দ্রে ছিলেন।

তাঁকে হত্যা করতে অভ্যুত্থানকারীরা ওই অবকাশ কেন্দ্রে বোমা হামলাও চালায়। কিন্তু বোমা হামলার আগেই সেখান থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন এরদোগান।

অভ্যুত্থানের প্রাথমিক দিকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম অভ্যুত্থান সামাল দেয়ার চেষ্টা চালান। কিন্তু তখনও এরদোগানকে প্রয়োজন ছিলো। কারন মানুষ জানতো, প্রকৃত ক্ষমতা এরদোগানের হাতেই।

এমন বিশৃঙ্খল ও সংকটময় মুহূর্তে যখন এরদোগানকেই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তখনই তিনি দেখা দিলেন। সিএনএন এর তুর্কী ভাষার নিউজ চ্যানেলে দেখা গেলো তাঁকে। সরকারি টিভি চ্যানেলের অনুপস্থিতিতে মোবাইল ফোনে ভিডিও সাক্ষাৎকার দেন তিনি। সাক্ষাৎকারে তুরস্কের জনগণকে রাস্তায় নেমে অভ্যুত্থান প্রতিহত করার ডাক দেন তিনি।

এরপর ইস্তাম্বুলের কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দরে এসে নেমে সংবাদ সম্মেলনে যখন ঘোষণা দিলেন, আমিই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। ক্ষমতা আমার হাতেই। এরপরই মূলত হাওয়া বদলে গেলো তুরস্কের।

এরদোগানের ডাকে সাড়া দিয়ে অসম সাহসের পরিচয় দিয়ে তুরস্কের জনগণও নেমে আসেন রাস্তায় এবং প্রতিরোধ করতে থাকেন সেনাদের। জনগণকে ঠেকাতে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে গোলাগুলি করতে থাকে সেনারা। তবে শেষপর্যন্ত তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

অভ্যুত্থান-চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পিছনে অবিশ্বাস্য অবস্থান নিয়েছে এরদোগানের সমর্থকরা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, একটি ট্যাংকের সামনে খালি গাঁয়ে দাঁড়িয়ে আছেন একজন এরদোগান সমর্থক। বলা হচ্ছে, তুরস্কের জনগণের একান্ত প্রচেষ্টা এবং অসম সাহসের ফলেই গণতন্ত্র হারানোর মতো ভয়ানক পরিস্থিতি থেকে বেঁচে গেলো তুরস্ক।

আপনি আরও পড়তে পারেন

ফ্রান্স হামলার দায় স্বীকার আইএসের

সমর্থকদের প্রতি রাস্তা না ছাড়ার আহ্বান এরদোয়ানের

তুরস্কে অভ্যুত্থান চেষ্টা: ১৫০০ সেনা আটক

তুরস্কে অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ, সেনাদের আত্মসমর্পণ

তুরস্কে অভ্যুত্থান চেষ্টায় ৬০ জনের মৃত্যু, আহত ৩ শতাধিক