জীবনের শেষ সময় টুকু দেশের মাটিতে কাটাতে চেয়েছিলেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা। কিন্তু পাসপোর্ট জটিলতায় পূরণ হয়নি তার সেই ইচ্ছা। সোমবার দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিএনপির এ দাপুটে নেতা।

sadek hosen khoka 2বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা

সাদেক হোসেন খোকা তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে যেমন ছিলেন পরাক্রমশালী নেতা, তেমনি ছিলেন ঢাকাবাসীর ভালোবাসার অভিভাবক। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জয় করেছেন রাজধানীবাসীর মন। সময়ে অসময়ে ছুটে গেছেন মানুষের কাছে, দুর্ভোগে থেকেছেন তাদের পাশে। কিন্তু তার পরও জীবনের শেষ সময় টুকু কাটাতে পারেননি তার প্রিয় নগরবাসীর সঙ্গে।

বিএনপির এ অবিসংবাদিত নেতা ১৯৫২ সালের ১২ মে পুরান ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায় তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন গেরিলা যোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে একধিক অপারেশন পরিচালনা করেন।

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে পা রাখেন সাদেক হোসেন খোকা। এর পর দীর্ঘদিন বামপন্থি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার পর আশির দশকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপির) রাজনীতি শুরু করেন এ মুক্তিযোদ্ধা। তৎকালীন এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও রাজপথে নির্ভয় ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৯০ সালে ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর পুরান ঢাকার বসবাসরত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার চেষ্টা হলে খোকা তা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এতে তিনি পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের ব্যাপক আস্থা অর্জন করেন।

পরে ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-৭ (সূত্রাপুর ও কোতয়ালি) আসন থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এতে তিনি দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হন। এ সময় তার দল বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি ফের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ঢাকার আটটি আসনের মধ্যে খোকার আসন ছাড়া বাকি সাতটিতে বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হয়। আর ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।

২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে অবিভক্ত ঢাক সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে জয়লাভ করেন বিএনপির দাপুটে এ নেতা। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত টানা নয় বছর তিনি ঢাকা সিটির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়দিন আগে সাদেক হোসেন খোকাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেলে তাকে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে সেখানকার চিকিৎসকরা তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতার কারণ শনাক্ত করতে পারেননি। পরে ২০১৪ সালের ১৪ মে ক্যান্সারের চিকিৎসা করানোর জন্য স্বপরিবারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান খোকা। তার পর থেকে গত সাড়ে পাঁচ বছর যাবৎ নিউ ইয়র্ক সিটির ইস্ট এলমহার্স্ট এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকছিলেন তিনি। এ সময় তার স্ত্রী ইসমত হোসেন সব সময় তার সঙ্গে ছিলেন।

অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন ওষুধ সেবনের ফলে মুখে ঘা হয়ে যায় এ রাজনীতিবিদের। ফলে তিনি খাবার খেতে পারছিলেন না। পরে গত ১৮ অক্টোবর তাকে মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসকরা তার শ্বাসনালীতে একটি টিউমার দেখতে পান। পরে ২৭ অক্টোবর অস্ত্রপচারের মাধ্যমে সেটি তার শ্বাসনালী থেকে অপসারণ করা হয়। এর পর তার অবস্থার আরো অবনতি হলে চিকিৎসকরা তার বাঁচার আশা ছেড়ে দেন।

দীর্ঘ এ রাজনৈতিক জীবনে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শুধু রাজনীতির মাঠ নয়, খেলাধুলার অঙ্গনেও দাপুটে ভূমিকা রেখেছেন খোকা। মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে ১৯৭২ সালে তিনি ব্রাদার্স ইউনিয়নের দায়িত্ব নেন এবং তিন বছরের মধ্যে ক্লাবটিকে তৃতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে উন্নীত করেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং ফরাশগঞ্জ ও ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ছিলেন।

জনবান্ধব নেতা হিসেবেও যথেষ্ট সুনাম ছিল সাদেক হোসেন খোকার। সুখে-দুঃখে, আপদে-বিপদে, ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে খোকাকে পাশে পেতেন পুরান ঢাকার জনগণ। যখনই কেউ বিপদে পড়েছে বা ডাক পড়েছে তখনই তাদের কাছে ছুটে গেছেন এ মুক্তিযোদ্ধা। এ জন্য পুরান ঢাকাবাসীর বিপুল সমর্থন ও ভালোবাসার মানুষ ছিলেন এ ঝানু রাজনীতিক।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.