আমির খসরু: দেশের দায়িত্ব ‘মহামানব’-এর হাতে দিতে জনগণ ১৬ বছর সংগ্রাম করেনি

অন্তর্বর্তী সরকার এখনও একটি ভালো বিকল্প—ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, দেশের দায়িত্ব কোনো ‘মহামানব’-এর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য জনগণ গত ১৬ বছর ধরে সংগ্রাম করেনি।

আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী

সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে ন্যাপ ভাসানী, আমজনতার দল এবং বাংলাদেশ পিপলস পার্টির সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

আল জাজিরা টেলিভিশনকে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আমির খসরু বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং জনগণের ভোটের অধিকার ও দেশের মালিকানা ফিরিয়ে আনার জন্যই ছিল এই ১৬ বছরের সংগ্রাম।’

ওই সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং দাবি করেন যে, জনগণ এখনও অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি ভালো সমাধান মনে করে এবং এখনই সরকারের বিদায় চায় না।

এর জবাবে খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ কোনো মহামানবের হাতে দেশের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার জন্য লড়াই করেনি বা বিপুল ত্যাগ স্বীকার করেনি। গণতন্ত্রের সমাধান দেওয়ার জন্য কোনো মহামানবের অপেক্ষায় বাংলাদেশের জনগণকে থাকতে হবে, এমনটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।’

তিনি আরও বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ও জবাবদিহি করবে। ড. ইউনূস কোন জনগণকে উদ্ধৃত করে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতায় থাকার কথা বলছেন, তা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন।

বিএনপি নেতা বলেন, ‘বিএনপি বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল এবং দেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে।’ তিনি উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে সক্রিয় প্রায় ৫০টি দল ইতিমধ্যে স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, নির্বাচন এ বছরের ডিসেম্বরের আগেই হওয়া উচিত।

খসরু পরামর্শ দেন, রাজনৈতিক দলগুলো যেসব সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্যে পৌঁছেছে, সেগুলোর ভিত্তিতে একটি জাতীয় সনদ প্রণয়নের পর সরকারের উচিত নির্বাচনের একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা ঘোষণা করা এবং অবিলম্বে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের তারিখ ও তফসিল ঘোষণার নির্দেশনা দেওয়া।

প্রধান উপদেষ্টা ‘জনগণ’ বলতে গণতন্ত্র ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের বিরোধী কোনো নির্দিষ্ট মহল বা সরকারি সুবিধাভোগীদের বুঝিয়েছেন কি না, সে প্রশ্নও তোলেন খসরু। তিনি বলেন, ‘এটা বোঝা কঠিন নয় যে, প্রধান উপদেষ্টা যাদের কথা বলছেন, তারা সংস্কারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে দাঁড় করাচ্ছে।’

আমির খসরু আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা থেকে তিনি সরে আসবেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই… জনগণ তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার গঠনের মাধ্যমে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রক্ত দিয়েছে।’

আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির চলমান আলোচনার অংশ হিসেবে সোমবারের বৈঠকে আমির খসরু ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।

অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে ন্যাপ ভাসানীর ১০ সদস্যের, মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে আমজনতার দলের ১২ সদস্যের এবং নাজমা আক্তারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পিপলস পার্টির আট সদস্যের প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেয়। বিএনপি গত ১৭ এপ্রিল থেকে জোট শরিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা শুরু করেছে।