ক্ষমতায় পরিবর্তন আনার ব্যাপারে মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ রয়েছে জানিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, রবিবারের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে তার জোট বিনা দ্বিধায় ক্ষমতায় আসবে। তবে নির্বাচনে জেতার ব্যাপারে সরকারের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি থাকায় তারা অস্বাভাবিক কাজ করছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এ কারণে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

dr kamal hossain new

রাজধানীর বেইলি রোডের বাসভবনে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. কামাল বলেন, জনগণের ইচ্ছার বাইরে কোনো সরকার গঠন করা হলে তার পতন ঘটবে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সফল না হলেও ঐক্যফ্রন্টকে লেগে থাকতে হবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সাক্ষাৎকালে বিএনপির সাথে জোট বাঁধা এই অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ জোটের নির্বাচনী প্রস্তুতি, পরিবেশ, প্রচারণা, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রত্যাশা, ভবিষ্যতে তার ভূমিকা ও দেশের গণতন্ত্র নিয়ে তার পর্যবেক্ষণসহ বেশকিছু বিষয়ে কথা বলেন।

তিনি বলেন, ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য জনগণের প্রতিক্রিয়া খুবই ইতিবাচক। নির্বাচন যদি শান্তিপূর্ণ হয় আমি বিনাদ্বিধায় বলতে পারি আমরা, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় আসব।

প্রখ্যাত আইনজ্ঞ ড. কামাল প্রশ্ন রেখে বলেন, কেন বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে? ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছে? এসব দেখে মনে হয় অবশ্যই সরকারের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি রয়েছে। সরকার যদি সবকিছু ভালো করে থাকে এগুলো করার কথা ছিল না। আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি আছে বলেই অস্বাভাবিক কাজগুলো করছে।

তিনি জানান, দাবি অনুযায়ী নির্বাচনী তফসিল এক মাস না পিছিয়ে মাত্র এক সপ্তাহ পেছানোর ফলে নির্বাচনী প্রস্তুতি পুরোপুরি নেয়া সম্ভব হয়নি।

নির্বাচনের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ঢাকায় সমাবেশ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তা করার অনুমতি পাননি জানিয়ে ড. কামাল বলেন, এটা সরকারের খুবই অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। এই ধরনের অস্বাভাবিক ব্যবহারে আমি বিস্মিত। সরকার স্বৈরাচারের মতো আচারণ করছে।

স্বৈরাচার এরশাদের সময়েও সমাবেশ করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বৈরাচার আগেও ছিল, কিন্তু এখন পুরো স্বৈরাচার। আমাদের শেষ সমাবেশটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু আমাদের তা করতে দেয়া হয়নি।

নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে ড. কামাল বলেন, পুলিশ আগেও দলীয় পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু এবার যে পরিচয় দিচ্ছে সেটা নজিরবিহীন। যাকে পাচ্ছে ধরছে, কেন ধরছে বললে তারা নীরব।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে কাজ করছে বলে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটা লজ্জাকর। স্বাধীনতার ৪৭তম বছর পরে এগুলো দেখার জন্য বেঁচে থেকেছি, এটা আমার সবচেয়ে বড় শাস্তি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করলে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব জানিয়ে এই অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ বলেন, দলীয় পক্ষপাতিত্ব থাকবেই। আমাদের যে অতীত ঐতিহ্য আছে এখনও মনে করি সেই ঐতিহ্য রেখে দলীয় কাউকে নয়, যে কেউ আইন ভঙ্গ করবে তাকে ধরবে, যারা বেআইনি কাজ করছে, সন্ত্রাস করছে, টাকার ব্যবহার করছে তাদের ধরার মাধ্যমে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ড. কামাল বলেন, ৪৭ বছরে অভিজ্ঞতা তো অনেক হয়েছে। ভালো নির্বাচন পেয়েছি, করেছি। বাজে নির্বাচনে যুদ্ধ করে পরাজিত হয়েছি। আবার এক সময় তা অতিক্রম করে জয়ীও হয়েছি।

দেশের রাজনীতিতে পরিপক্কতা আসেনি জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে দায়িত্বের সময় বিরোধীদলের প্রতি তার উদারতা দেখেছি। তিনি (বঙ্গবন্ধু) বিরোধীদলেকে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দিতেন। তার কাছে বিরোধীরা শত্রু নয়, গণতান্ত্রিক শক্তি। আমরা সেগুলো মেনে কাজ করেছি।

গণতন্ত্র সম্পর্কে বলতে যেয়ে এই রাজনীতিবিদ বলেন, গণতন্ত্র শুধু ভোট দিয়ে হয় না। তা মানসিকতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অন্তর থেকে বিশ্বাস ও অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা থেকে আসে।

এখন তথাকথিত রাজনীতি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে জানিয়ে ড. কামার বলেন, আমরা এটাকে রাজনীতি বলতে পারি না। অসুস্থ রাজনীতি সবচেয়ে বড় ক্যানসার। আমি কী পেলাম এটা রাজনীতি না। রাজনীতি হলো মানুষের জন্য যা বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন আহমদরা করে গেছেন।

বঙ্গবন্ধুর সহচর ড. কামাল বলেন, তাজউদ্দীনকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল, কিন্তু দেশের প্রতি ও নেতার প্রতি (বঙ্গবন্ধুর) তার যে আনুগত্য তা কমেনি। এখন কাউকে সরিয়ে দেয়া হলে, তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধুই, উনি যেটা করেছেন তা আমার পক্ষে চিন্তাও করা যেত না। এটা ছিল সুস্থ রাজনীতি।

ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন সে ব্যাপারে অস্পষ্টতা প্রসঙ্গে জোটের শীর্ষ নেতা ড. কামাল বলেন, কিছুটা অস্পষ্টা রয়েছে। তবে আমি তো মনে করি যদি নাম লেখা শুরু করেন তাহলে ৪ থেকে ৫টা নাম লিখতে পারবেন। যার মধ্যে সবাইকে মিলে বাছাই করতে হবে। তো সেরকম যোগ্য ৪-৫ জন ব্যক্তি তো আছে।

তিনি আরও বলেন, শরিকদলগুলোর মধ্যে বিএনপির মধ্যে যারা মন্ত্রী ছিলেন, বেশ কয়েকজন এক/দুবার মন্ত্রী হয়েছেন, মন্ত্রী হওয়ার আগেও ভালো কাজে জড়িত ছিলেন। তারা অভিজ্ঞ ও শিক্ষিত লোক। আমাদের দলেও বেশ কয়েকজন আছেন। তাদের যে কেউ (প্রধানমন্ত্রী) হতে পারেন।

দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে বেঁচে থাকার ইচ্ছা জানিয়ে ঐক্যফ্রন্ট প্রধান বলেন, আমার বড় পদের ব্যাপারে কোনো ইচ্ছা নেই। কারণ আমি বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলাম এবং বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনের সহকর্মী ছিলাম। আমি ভাগ্যবান যে জীবনের শুরুর দিকে এতটা সুযোগ পেয়েছিলাম। আমি এতেই সন্তুষ্ট।

জনগণের জন্য কাজ করার সুযোগ পেলে যেকোনো সরকারের সাথে কাজ করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমি অনেক বড় মামলা লড়েছি। শেভরনের বিপক্ষে মামলায় পাঁচ মিলিয়ন ডলার জয় পেয়েছিলাম, কিন্তু আমি কোনো ফি নেইনি।

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপিসহ কয়েকটি দলকে নিয়ে জোট বাধা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রধান বলেন, দেশপ্রেমিক জনতার যে ঐক্য এটা খুব বড় শক্তি। এদের জোর করে হারিয়ে দেয়া যায় না। এই জোটটাকে থাকতে হবে, লেগে থাকতে হবে এবং জনগণের জন্য কাজ করতে হবে।

অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতীতে কী হয়েছে তা দেখেছেন তো। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সরকার গঠন করলে তাদের পতন ঘটে, পতন ঘটানো হয়। এরশাদের অবস্থা দেখেছেন তো।

আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর, ইউএনবি।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.