গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার আশ্বাস

চলমান গ্রীষ্ম মৌসুমে দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে বলে আশ্বস্ত করেছেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রেজাউল করিম। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে বিদ্যমান সব বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল রাখার জন্য কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।

বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিপিডিবি চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, বর্তমানে দৈনিক গড়ে ১৪,০০০ থেকে ১৪,৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে, যেখানে চাহিদা থাকছে প্রায় ১৫,০০০ মেগাওয়াট। তবে গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ১৮,০০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে বিপিডিবি পূর্বাভাস দিয়েছে। এই চাহিদা মেটাতে সর্বোচ্চ ১৭,২৬০ মেগাওয়াট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও ২০২৪ সালে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন রেকর্ড করা হয়েছে ১৬,৪৭৭ মেগাওয়াট।

বিপিডিবি’র তথ্যমতে, ১৯ এপ্রিল দেশে ১১,৯৭১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিপরীতে চাহিদা ছিল ১৪,৪৫১ মেগাওয়াট। কর্মদিবসে এই চাহিদা প্রায় ১৫,০০০ মেগাওয়াটে পৌঁছে যায়। গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ ৭৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত ঘাটতি থাকতে পারে বলে ধারণা করা হলেও, এটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে বিপিডিবি সূত্র জানিয়েছে। তবে কারিগরি ত্রুটি বা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে দুই কার্গো এলএনজি আমদানির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়া, কাতার ও ওমানের সাথে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী এলএনজি চুক্তিও বলবৎ রয়েছে।

অন্যদিকে, গ্রীষ্মকালে লোডশেডিং কমাতে এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সরকার কিছু নির্দেশনা জারি করেছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, সরকারি অফিস, ব্যাংক, বাড়ি এবং মসজিদে এয়ার কন্ডিশনারের তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে না রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা মানা হলে প্রায় ২,০০০ থেকে ৩,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব, যা সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করবে।

তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন যে, চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধানের কারণেই মূলত লোডশেডিং হয়। তবে ট্রান্সফরমার বিকল হওয়া বা ঝড়-বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট কারিগরি ত্রুটিও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ হতে পারে। সরকার গ্রীষ্মকালীন চাহিদা মেটাতে উৎপাদন বৃদ্ধি, জ্বালানি সংগ্রহ এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয় – এই তিন দিকেই মনোযোগ দিচ্ছে।