বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিক সমাজের উদ্বেগের কিছু নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যেসব সাংবাদিক মিথ্যা লিখবেন না তাদের জন্য কোনো সমস্যা নেই। এই আইন মূলতই সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে আনতে করা হয়েছে। যা এখন সারা বিশ্বের কাছেই উদ্বেগের।

pm hasina

জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদান শেষে দেশে ফেরার পর আজ বুধবার (৩ অক্টোবর) গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।

লিখিত বক্তব্যের পর তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিক সমাজের মধ্যে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারও যদি অপরাধী মন না থাকে তবে তার উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

তিনি বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে বিষেদাগার করে লেখা হয়, মানহানি করা হয় তাদের বিষয়টি ভাবা হয় না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এমন মিথ্যে সংবাদ যার বিরুদ্ধে করা হয়। এর জন্য সেই ব্যক্তিকে আমি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পক্ষে।’

বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল জাতিসংঘে গিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে কথা বলেছে। সেক্ষেত্রে আপনাকে কী তারা (জাতিসংঘের পক্ষ থেকে) কিছু বলেছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কি আসে যায়? তারা আমাকে উৎসাহিত করেছেন, আমি যেন আবারো ক্ষমতায় আসি তারা সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।’

নির্বাচনী ইশতেহার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমরা ২০০৮ সালে ২০২১ সালে জিডিটাল বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনার কথা বলেছিলাম। এরপর ২০৪১ সালে উন্নত দেশের কথা বলেছি। সে অনুযায়ী কাজও করেছি। এখন আমরা আগামী শতাব্দী পর্যন্ত পরিকল্পনা করেছি। যার নাম ‘ডেলটা প্লান’ দিয়েছি। তখন দেশে ক্ষুধা, দারিদ্র্যতা থাকবে না। সে সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঠিক তথ্য দিয়ে মানুষকে নিরাপদ করা হবে। ’

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন সঠিক সময়ে এবং সংবিধান অনুসারেই হবে। সেখানে কারা অংশগ্রহণ করলো, আর কারা করলো না, তা দেখার সুযোগ নেই। ২০১৪ সালে আমরা চেয়েছিলাম সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন হোক তাই আমরা তাদের (বিএনপিকে) ডেকেছিলাম। কিন্তু তারা আসেনি, এখন আর সেই অবস্থা নেই। ’

‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ হওয়ায় আওয়ামী লীগ উদ্বেগে আছে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উদ্বেগ কিসের? আমি তাদের জোট হওয়ায় খুশি। কেননা বাংলাদেশে ভোট দুই ধরনের ভোট আছে, এক আওয়ামী লীগের, আর বাঁকি আওয়ামী লীগ বিরোধী। তাই বিরোধীদের ভোটের জন্য তো একটি দল বা জোট হওয়া দরকার। তাই এই জোট দরকার আছে।’

জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘আমি ইভিএম-এর পক্ষে। দেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে গেছে। এখনও কেনো ব্যালট পেপার ব্যবহার করা হবে। যেহেতু ইভিএম কেনার জন্য বরাদ্দ দিয়েছি, তাই আওয়ামী লীগও এর পক্ষে।’

সাবেক বিচারপতি এসকে সিনহার বই ও বক্তব্য বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তার পদত্যাগের বিষয়ে আমাদের করার কিছু ছিল না, তার সহকর্মীরাই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে নালিশ করেছিলেন। তারপর তিনি বিদেশ গেলেন, পদত্যাগ করলেন। আর তিনি যে বই লিখেছেন তা আপনারা পড়েন। ’

আওয়ামী লীগ ভারত বা বিদেশির সাহায্যে ক্ষমতায় থাকতে চায় না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (বিএনপি) তো ভারতে গিয়েছে যেন ভারত আমাকে সহযোগিতা না করে। বরং তারা আপমানিত হয়ে ফিরে এসেছে। আসলে আমরা ভারত কিংবা বিদেশি কোনো শক্তি সাহায্যে ক্ষমতায় আসতে চাই না। দেশের মানুষ যদি চায়, তবে ফের আমরা ক্ষমতায় আসবো নইলে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৪ দলীয় জোট বড় করার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে যদি কেউ আসে তাকে স্বাগত জানানো হবে।’ আর নির্বাচলনকালীন সরকারের কলেবর কেমন হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ সময় মন্ত্রিসভা ছোট করার পরিকল্পনা আছে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর যেহেতু সংসদ বসার সুযোগ নেই, তাই সেটা বাদ। তবে ১৪ দলীয় জোট ও শরিকদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ’

কওমী মাদ্রাসায় পড়ুয়াদের সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যই তাদের সনদ জাতীয়করণ করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কওমীতে প্রায় প্রতি বছর ১৫ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে বের হয়। তারা কি পড়ছে, তারা কি শিখছে সেটা সরকারের জানা দরকার। তাছাড়া তাদের সামাজিক স্বীকৃতিও দেওয়া দরকার, যাতে তারা সমাজের মূলস্রোতের সঙ্গে চলতে পরে এজন্যই আমরা কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাকে ফাযিল ও কামিলের মতই সমমানের শিক্ষার মর্যাদা দিয়েছি।’

সংবাদ সম্মেলনে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসকারি টেলিভিশন গণভবন থেকে এই সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে গত ২১ সেপ্টেম্বর দেশ ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় সপ্তাহব্যাপী সেখানে অবস্থান করে ১ অক্টোবর দেশে ফেরেন । যুক্তরাষ্ট্রে সফরকালে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রতিবারের মতো এবারও বাংলায় ভাষণ দেন। তার ভাষণে চলমান রোহিঙ্গা সংকটে জাতিসংঘ ও মিয়ানমারের মধ্যকার চুক্তি বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.