'আমরা দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চাই'

চলমান রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির অবিলম্বে এবং কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার ফলে বাংলাদেশের ওপর ব্যাপক আর্থ-সামাজিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের সাথে মিয়ানমারের যে চুক্তি হয়েছে আমরা তার বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতা দেখতে চাই।’

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে ভাষণকালে এ সব বলেন প্রধানমন্ত্রী। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও বাংলা ভাষায় বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকটের উত্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেহেতু রোহিঙ্গা সমস্যার উদ্ভব মিয়ানমারে, তাই এর সমাধানও সেখানে হতে হবে। আমরা দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের যে বিবরণ জাতিসংঘের প্রতিবেদনে এসেছে তাতে আমরা হতভম্ব। আমরা আশা করি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘ মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন, অত্যাচার ও অবিচারের বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব দেবে।

‘একজন মানুষ হিসেবে রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশাকে আমরা যেমন অগ্রাহ্য করতে পারি না, তেমনি পারি না নিশ্চুপ থাকতে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দুর্দশার টেকসই ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আমি পাঁচদফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেছি। কিন্তু আমরা আশাহত যে, আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত মিয়ানমারে স্থায়ী ও টেকসইভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি।

মিয়ানমার বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রথম থেকেই আমরা দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে তিনটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে কোনো কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না।’

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অনিশ্চিত ও মানবেতর জীবনযাপন করছে। বাংলাদেশ সাধ্যমতো তাদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা নিরাপত্তা এবং শিশুদের যত্নের ব্যবস্থা করেছে। জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ওআইসিসহ অনেক দেশ ও সংস্থা রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছে এবং তাদের সাহায্য ও সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। এজন্য তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রেখে আমরা নতুন আবাসন নির্মাণের কাজ শুরু করেছি যাতে তারা একটি ভালো ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে বসবাস করতে পারে।’

তিনি এই উদ্যোগে বাংলাদেশকে সহযোগিতার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান।

রোহিঙ্গাদের মতো সারা বিশ্বে নিজ ঘর থেকে বিতাড়িত অসংখ্য মানুষের দুঃখে তিনি ব্যথিত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতি অগ্রাহ্য করে শান্তিপূর্ণ, ন্যায্য ও টেকসই সমাজ গড়ে তোলা অসম্ভব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যে গণহত্যা বাঙালিদের ওপর চালিয়েছিল মিয়ানমারের ঘটনা সে কথা বারবার মনে করিয়ে দেয়।

শান্তিরক্ষী প্রেরণের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তির রক্ষায় বাংলাদেশ বিশেষ অবদান রাখছে উল্লেখ করে নিরাপদ, নিয়মিত ও নিয়মতান্ত্রিক অভিবাসন বিষয়ে আরো দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও মানবাধিকার কেন্দ্রিক পদক্ষেপের আশা করেন তিনি।

সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদ ও সকল সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রতিবেশী দেশগুলোর স্বার্থবিরোধী কোনো কার্যক্রম বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আমরা পরিচালিত হতে দিব না। সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় আমাদের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অব্যাহত থাকবে।

জাতিসংঘের বক্তব্যের সবশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পথচলা এখনো শেষ হয়নি। এ পথচলা ততদিন চলবে, যতদিন না আমরা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে ক্ষুধা, দারিদ্র, নিরক্ষরতা এবং শোষণমুক্ত সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারব।’ ইউএনবি।