পর্যটন খাতের বিকাশে প্রয়োজন বাংলাদেশি মিশনগুলোর শক্তিশালী ভূমিকা

দেশের পর্যটন খাতের বিকাশে বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোর শক্তিশালী ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। আর এ জন্য প্রয়োজন হলে সরকারকে পর্যটন উইং খোলার পরামর্শ দিয়েছে ট্যুর অপারেটরগুলো। তারা চায় সরকার যেন এ ব্যাপারে বিদেশে সব মিশনগুলোকে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশনা দেয়। কারণ অপারেটরদের মতে জাতীয় অর্থনীতিতে পর্যটন খাতের আরো বৃহত্তর উপায়ে অবদান রাখার বিপুল সম্ভবনা রয়েছে।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টিওএবি) পরিচালক তৌফিক রহমান বলেন, ‘বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোর বড় ভূমিকা পালন করার আছে। বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের নিজস্ব বৈদেশিক উইং নেই। তাই আমরা বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে পর্যটন উইং চাই।’

তিনি জানান, বর্তমানে বিদেশি মিশনগুলোর বাণিজ্যিক কাউন্সিলররা পর্যটন খাত সংক্রান্ত দায়িত্বগুলো পালন করে থাকেন। কিন্তু তা যে পর্যাপ্ত নয় সেটি গত ১৫-২০ বছরের কর্ম দক্ষতায় দেখা যাচ্ছে।

জার্নি প্লাসের প্রধান নির্বাহী তৌফিক বলেন, ‘হয় বাণিজ্যিক কাউন্সিলরদের পর্যটনের বিষয়টি দেখভাল করার জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব দিতে হবে বা অবশ্যই পর্যটন উইং খুলতে হবে।’

তিনি জানান, হলি আর্টিজান ঘটনার পর অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও অন্যান্য যেসব দেশ থেকে অধিক হারে পর্যটক আসেন তারা এসব ইতিবাচক উন্নতি সম্পর্কে কতটুকু জানতে পেরেছেন তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

তৌফিক বলেন, ‘তাদের (বিদেশি পর্যটক) বাংলাদেশকে গভীরভাবে জানতে দিন। বৈদেশিক মিশনগুলো পর্যটনের সম্ভাবনা নিয়ে সাপ্তাহিক বা মাসিকভাবে অবহিতকরণ অনুষ্ঠান করতে পারে।’

বিদেশে মিশনগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে একজন সিনিয়র কূটনীতিক বলেন, বিদেশে বাংলাদেশের সকল মিশন তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন এবং তাদের ওপর বাংলাদেশ সরকার দায়িত্ব দেয় যা তারা মেনে চলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কূটনীতিক বলেন, ‘ওই দেশগুলোতে পর্যটনের প্রচারণা চালানোও তাদের দায়িত্বের অংশ।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সংস্কৃতি, ইতিহাস, প্রথা এবং ঐতিহ্যসহ বাংলাদেশের পর্যটন খাতের প্রচারণায় মিশনগুলো তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মিশনগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সদর দপ্তরের যথাযথ সমর্থন এবং সহযোগিতা ছাড়া এটা একা কিছু করতে পারে না।’

একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলায় উচ্চমান সম্পন্ন পর্যটন ডকুমেন্টারি এবং সিনেমা প্রদর্শন করা উচিৎ।’

টিওএবি উপদেষ্টা এম মাসুদ হোসাইন বলেন, ‘অর্থ এবং পররাষ্ট্রসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় পর্যটন খাতের সাথে জড়িত।’

তিনি বলেন, ‘পর্যটনের মতো একটি সংবেদনশীল খাতের দায়িত্ব বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড একাই বহন করবে বলে চিন্তা করা ঠিক হবে না।’ এক্ষেত্রে বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোর ভূমিকার প্রতি জোর দেন তিনি।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ৬ লাখ ২০ হাজার পর্যটক বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছে। যদিও সরকারের টার্গেট ১০ লাখ পর্যটক। ২০১৬ পঞ্জিকা বর্ষে পর্যটন খাত থেকে বাংলাদেশ ১৬৩.২১ মিলিয়ন ইউএস ডলার আয় করেছে। যেখানে ২০১৫ সালে এই খাতে আয় ছিল ১৪৫.৭৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার।

একেএম মঈনুদ্দিন, ইউএনবি।