রেকর্ড গড়েও পারলো না বাংলাদেশ

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ধাঁধা মেলাতে আবারও ব্যর্থ বাংলাদেশ। মিরপুরে বৃহস্পতিবার নিজেদের সেরা স্কোর করেও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদরা হেরে গেলেন চার উইকেটের বড় ব্যবধানে। বিফলে গেলো সৌম্য সরকার ও মুশফিকের রহিমের দারুণ দুটি ইনিংস।

অথচ সৌম্য ও মুশফিকই তৈরি করে দিয়েছিলেন বিজয়ের মঞ্চ। যে মঞ্চে উঠে জয়োৎসব করার সব রকম দাবিই ছিলো বাংলাদেশের। কিন্তু বোলারদের দিল-খোলা বোলিংয়ের দিনে ম্লান হয়ে গেছে এ দুজনের ব্যাটিং প্রচেষ্টা। থিসারা পেরেরার অভিজ্ঞ হাতের ব্যাট বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছে বিষাদের সন্ধ্যা।

এ দিন টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তাদের জন্য মিরপুরে প্রস্তুত ছিলো ব্যাটসম্যানদের প্রলয়নাচনের উইকেট। সৌম্য পাওয়ার প্লেতেই বুঝিয়ে দেন যে, এ উইকেটে কেবল রানের ফোয়ারাই ছুটতে পারে, আর কিছু নয়।

ক্যারিয়ারে পাঁচ পাঁচবার চল্লিশের ঘরে গিয়েও হাফ সেঞ্চুরির ছোঁয়া না পাওয়া সৌম্য এ দিন ভুল করেননি। তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। তার ইনিংসটা যেতে পারতো আরো উঁচুতে। ছুঁতে পারতো নতুন সাফল্যের সীমানা। কিন্তু জিবন মেন্ডিসের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ফিরতে হয় তাকে।

সৌম্যর আউটে তার যতোটা না দায় কিংবা বোলারের যতোটা সাফল্য, তার চেয়ে বেশি দায় ও ‘সাফল্য’ আম্পায়ারের। তিনিই যে অফস্টাম্পের বাইরের বলে আউট বলে দেন সৌম্যকে!

সৌম্যের বিদায়ের আগেই মাত্র ১০ রান করে বিদায় নেন জাকির হাসান। অভিষিক্ত এই তরুণের পথ ধরে ব্যর্থ হন আফিফ হোসেনও। তিনি রানই করতে পারেননি। বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার টিকে ছিলেন মাত্র তিন বল।

তারপরও বাংলাদেশের রান দুইশর কাছাকাছি যায় মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহর ৭৩ রানের চতুর্থ উইকেট জুটিতে। গত ২৬ ইনিংসে মাত্র একবার চল্লিশর ঘরে যেতে পারা মুশফিক এ দিন ৬৬ রানে অপরাজিত থাকেন। যা টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তার সর্বোচ্চ রান। কিন্তু দিন শেষে মুশফিকের এই ইনিংস কেবল পরিসংখ্যানের পাতার একটা সংখ্যা ছাড়া কিছুই হতে পারলো না।

জবাব দিতে নেমে শুরুটাই দুর্দান্ত করে শ্রীলঙ্কা। ওপেনিং জুটিতে ৫৩ রান এনে দেন কুসাল মেন্ডিস ও দানুসকা গুনাথিলাকা। এ জুটি এতোটা স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করেন, যা দেখে লঙ্কান ড্রেসিংরুম ভরে যায় স্বস্তির বাতাসে। যে স্বস্তি শেষ পর্যন্ত জয় এনে দেয় তাদের।

কুসাল মেন্ডিস করেন ৫৩ রান। শ্রীলঙ্কার ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি ওই একটিই। বেশির অবশ্য দরকারই পড়েনি। ৪২ রানে অপরাজিত থাকা দাসুন সানাকা ও ৩৯ রানে অপরাজিত থাকা থিসারা পেরেরা নিশ্চয় হাফ সেঞ্চুরি বা তার চেয়েও বেশি রান করতে পারতেন। কিন্তু সেটার তো দরকারই ছিলো না। তারা ফিরে যান ২০ বল বাকি থাকতে খেলা শেষ হয়ে যাওয়ায়। কে জানে, আর কিছু রানের জন্য আফসোস নিয়েই তারা ফিরেছেন কিনা!

বাংলাদেশ এ দিন বল হাতে ছিলো চূড়ান্ত ব্যর্থ। বিশেষ করে রুবেল হোসেন। তিন ওভার চার বলে তিনি খরচ করেন ৫২ রান। ৩০-এর উপরে রান দেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও মোস্তাফিজুর রহমানও। এ দিন দলের সেরা বোলার ছিলেন অভিষিক্ত নাজমুল ইসলাম অপু। তিনি চার ওভারে ২৫ রান দিয়ে নেন দুটি উইকেট। তার উইকেট পাওয়ার সুবাদে ‘শর্পনাচন’ দেখার সৌভাগ্য হয় মিরপুরের দর্শকদের। কিন্তু ম্যাচ শেষে নাজমুলের শর্পনাচন নয়, বরং মনে থাকবে কেবল লঙ্কানদের জয়োল্লাসই!