ছবিতে ছবিতে আশিস নেহরার ক্যারিয়ার

নব্বইয়ের দশকে, মানে চলতি শতাব্দী শুরু হওয়ার আগে অভিষেক হওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে এখনো খেলে যাচ্ছেন, এমন ক্রিকেটার বলতে গেলে নেই-ই। কিন্তু আশিষ নেহরা ‘এখনো’ আছেন। যদিও এই থাকাটা আর খুব বেশি দীর্ঘ হবে না।

আগামী মাসের প্রথম দিনেই ক্রিকেট কিটস তুলে রাখছেন তিনি। তার আগে ছবিতে ছবিতে দেখে নেয়া যাক ১৮ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে যাওয়া এই ভারতীয় পেসারের ক্যারিয়ার। আশিস নেহরা ভারতের হয়ে মোট ১৭টি টেস্ট, ১২০টি ওয়ানডে এবং ২৬টি টি-টোয়েন্টি খেলেন। শিকার করেন যথাক্রমে ৪৪, ১৫৭ ও ৩৪টি উইকেট।

পেসারদের ক্যারিয়ার আসলে সেভাবে দীর্ঘ হয় না, যতোটা হয় ব্যাটসম্যানদের। এই সত্যটা মিথ্যায় পরিণত হয় আশিস নেহরার দিকে তাকালে। ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে শুরু করা নেহরা যেনো থামতেই চাচ্ছিলেন না!

মজার ব্যাপার হলো, ১৮ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেললেও আশিস নেহরা টেস্ট খেলতে পেরেছেন মোটে ১৭টি। মানে বছরে একটারও কম টেস্ট খেলেছেন তিনি!

গত শতাব্দীর শেষ বছরে, মানে ১৯৯৯ সালে টেস্ট খেলা শুরু করেন নেহরা। টেস্ট দিয়েই শুরু হয় তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। এর দুই বছর পর ওয়ানডেও খেলা শুরু করেন তিনি। ওয়ানডে শুরুর পাঁচ বছরের মাথায়, রাওয়ালপিন্ডিতে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজের শেষ টেস্ট খেলেন নেহরা।

এতো বছর ধরে খেললেও নেহরা কিন্তু ভারতীয় দলের নিয়মিত মুখ ছিলেন না কখনোই। ইনজুরির কারণে তার ক্যারিয়ারটা ভাগ হয়ে গেছে ছোট ছোট অংশে। ইনজুরির এতো ছোবলের পরও নেহরা কিভাবে কিভাবে যেনো বারবার ফিরে এসেছেন খেলায়, বারবার জায়গা করে নিয়েছেন ভারতীয় দলে।

অল্প অল্প সুযোগ পেলেও মাঝে মাঝে নেহরা এমন কিছু করেছেন, যা তাকে নিয়ে গেছে আলোচনার শীর্ষে। ২০০৩ বিশ্বকাপেই যেমন, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৩ রানে ছয় উইকেট নিয়ে নেন তিনি। যা বিশ্বকাপে ভারতীয় কোনো বোলারের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড হিসেবে এখনো টিকে আছে। দুই বছর পর ক্যান্ডিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আবার ছয় উইকেট নেন তিনি।

নেহরা তার সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছেন ২০১১ সালে। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচে হাতের আঙুল ভেঙে মাঠের বাইরে ছিটকে যেতে হয় তাকে। পরে ফাইনালে আর খেলা হয়নি তার। ওই বছর দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জিতে ভারত।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মতো আইপিএলেও খেলেছেন নেহরা। ২০০৮ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএল শুরু করেন তিনি। এরপর দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, চেন্নাই সুপার কিংস, পুনে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়া (অধুনা বিলুপ্ত) ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে খেলেছেন তিনি।

নিজের শরীরের সীমাবদ্ধতাগুলো খুব ভালো বোঝেন নেহরা। এ কারণে সুকৌশলে বোলিং অ্যাকশনে সামান্য পরিবর্তন এনে টি-টোয়েন্টিতে মনোযোগ দেন তিনি। যদিও ব্যাপারটা ঘটেছে অনেক পরে। নেহরা যদি শুরু থেকেই তার শরীরের প্রতি যত্নবান হতেন, ভারত হয়তো তার মধ্যে সত্যি সত্যি একজন গ্রেট খেলোয়াড়কে পেতো।

আইপিএলে দারুণ খেলে ফের জাতীয় দলে ডাক পান নেহরা; যখন তার বয়স হয়ে গেছে ৩৭। এই বয়সে টি-টোয়েন্টির মতো তরুণদের খেলায় তার সুযোগ পাওয়াটা ছিলো বিস্ময়কর।

আগামী নভেম্বরের এক তারিখে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবেন নেহরা। নিজের ঘরের মাঠ ফিরোজ শাহ কোটলায় ম্যাচটি খেলবেন তিনি। নেহরা এর আগে সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমি বিরাট ও কোচকে (রবি শাস্ত্রী) বলেছি যে, ভুবনেশ্বর ও জাসপ্রিট খুব ভালো খেলছে। আমার তাই এখন সরে যাওয়াই উচিত।’