সুদানে প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার গঠনের ঘোষণা আরএসএফের

সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) মঙ্গলবার দেশটিতে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। গৃহযুদ্ধ শুরুর দুই বছর পূর্তির কাছাকাছি সময়ে এই ঘোষণা এলো। এই সংঘাতে ইতিমধ্যে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এবং জাতিসংঘ পরিস্থিতিটিকে বিশ্বের ‘সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট’ হিসেবে অভিহিত করেছে। সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

আরএসএফ-প্রধান মোহামেদ হামদান দাগালো

আরএসএফ-প্রধান মোহামেদ হামদান দাগালো, যিনি হেমেদতি নামে পরিচিত, মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রামে জানান, তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে ‘শান্তি ও ঐক্যের সরকার’ গঠন করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ দেশটির সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি একটি সরাসরি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে দাগালো বলেন, "এই বার্ষিকীতে আমরা গর্বের সাথে ঘোষণা করছি যে, শান্তি ও ঐক্যের সরকার গঠিত হয়েছে, যা সুদানের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে।" উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে নাইরোবিতে আরএসএফ ও তার মিত্ররা একটি সনদে স্বাক্ষর করেছিল, যেখানে একটি বিকল্প প্রশাসন গঠনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ ছিল।

দাগালো আরও দাবি করেন, তারা একটি ‘রূপান্তরকালীন সংবিধান’ অনুমোদন করেছেন যা ‘একটি নতুন সুদানের রোডম্যাপ’ হিসেবে কাজ করবে। এই প্রস্তাবিত সংবিধানে দেশের সব অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বকারী ১৫ সদস্যের একটি প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিল গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন যে, এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত সুদানকে স্থায়ীভাবে বিভক্ত করে ফেলতে পারে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুদান বিশেষজ্ঞ শরথ শ্রীনিবাসন আল জাজিরাকে বলেন, "দারফুরে আরএসএফ-এর অবস্থান এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা ডি ফ্যাক্টো (বাস্তব কিন্তু আনুষ্ঠানিক নয়) বিচ্ছেদের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।"

২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক সমাধান মেলেনি। সুদানের সেনাবাহিনী ও আরএসএফ একসময় মিত্র ছিল এবং ২০২১ সালে তারা একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে, যা দুই বছর ধরে চলা এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতে রূপ নেয়।

এদিকে, সম্প্রতি উত্তর দারফুরের জামজাম ও আবু শৌক শরণার্থী শিবিরে আরএসএফের হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত শুক্রবার ও শনিবারের এসব হামলায় অন্তত ৩০০ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেন, "আরএসএফ বেসামরিক নাগরিক ও মানবিক সহায়তাকারীদের ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে, এমন খবরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।" তিনি সকল পক্ষকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানান এবং এর লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানান।