ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের ডাক দিলেন মুফতি তাকি উসমানি, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে জোর

ইসরায়েল ও তার সমর্থক দেশগুলোর পণ্য বর্জনে মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও ওয়েফাকুল মাদারিসের প্রধান মুফতি তাকি উসমানি। তবে এই বর্জন ও প্রতিবাদ অবশ্যই শান্তিপূর্ণ হতে হবে বলেও তিনি জোর দিয়েছেন। খবর এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

মুফতি তাকি উসমানী

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাজধানী ইসলামাবাদে ‘ন্যাশনাল প্যালেস্টাইন কনফারেন্স’- এ বক্তব্য রাখার সময় মুফতি উসমানি বলেন, ইসরায়েল ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে। তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, গাজায় নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় ব্যবহৃত না হলে মুসলিম দেশগুলোর বিশাল সেনাবাহিনী ও অস্ত্রের কোনো প্রয়োজন আছে কি? গাজায় জিহাদে অংশগ্রহণ না করলে এসব সেনাবাহিনী রাখার উদ্দেশ্যই বা কী?

মুফতি উসমানি গাজা ও ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের নৃশংসতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরবতা এবং নিষ্ক্রিয়তার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি গাজাবাসীদের রক্ষায় মুসলিম রাষ্ট্রনেতাদের সক্রিয় ভূমিকা পালনের জোর আহ্বান জানান। ইসরায়েল ও তার মিত্র দেশগুলোর পণ্য বর্জনের পাশাপাশি ইসরায়েলকে সহায়তাকারী কোম্পানিগুলোও বর্জনের আহ্বান জানান তিনি।

তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, ইসরায়েলবিরোধী যেকোনো আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হতে হবে। কারণ ইসলামী শরিয়তে কোনো ব্যক্তি বা সম্পত্তির ক্ষতি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পাথর নিক্ষেপ বা সহিংসতা কোনো সমাধান নয়।

পাকিস্তানের ঐতিহাসিক অবস্থানের কথা স্মরণ করে মুফতি উসমানি বলেন, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগেই ইসরায়েলকে অবৈধ রাষ্ট্র ঘোষণা করেছিলেন। আজও পাকিস্তানের সেই অবস্থান অপরিবর্তিত।

এই সম্মেলনে জামিয়াত উলামায়ে ইসলাম (জেইউআই-এফ)-এর প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান ইসরায়েলকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ বলে আখ্যায়িত করেন এবং মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বের ‘নিরবতা’ ও ‘নিষ্ক্রিয়তার’ সমালোচনা করেন। তিনি গাজায় সামরিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান।

সাবেক সিনেটর মুশতাক আহমেদ খান ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘চলমান গণহত্যা’র কথা উল্লেখ করে ৫৭টি মুসলিম দেশকে কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেন।

সম্মেলনের বক্তারা জানান, গাজায় চলমান সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। তারা বলেন, এই আগ্রাসনে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভূমিকা উদ্বেগজনকভাবে নীরব।

সম্মেলনে শুক্রবার (১১ এপ্রিল)-কে ‘নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের দিবস’ ঘোষণা করা হয় এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশের আহ্বান জানানো হয়।

সম্মেলন শেষে একটি সর্বসম্মত ঘোষণায় ইসরায়েলকে স্বীকৃতি প্রদানকারী দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা, নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি অর্জন না হওয়া পর্যন্ত যোগাযোগ নিরপেক্ষ নীতি প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে, ফিলিস্তিনের দুর্দশার মুখে সকল মুসলমানের উপর জিহাদকে ফরজ করার আহ্বান জানানো হয় এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে মুসলিম বিশ্বকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।