মাইলামের দাবি, ১০ বছর ভিসা পাননি বাংলাদেশে আসার

শনিবার (৮মার্চ) বাংলাদেশে এক আলোচনা সভায় পূর্বতন মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম দাবি করেন যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১০ বছরে তিনি বাংলাদেশে আসার ভিসা পাননি।

পূর্বতন মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম (ছবিতে মাঝে)

ঢাকায় আয়োজিত ‘ঢাকায় নতুন ভোর: গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের গতিপথ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় মাইলাম বলেন, ‘গত ১০ বছরে আমি বাংলাদেশে আসার ভিসা পাইনি।’ গত পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করছেন, এমন মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, একজন অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক হিসেবে তিনি অনেক লেখালেখি করেছেন এবং তার লেখাগুলো তাকে ক্ষমতাসীনদের শত্রুতে পরিণত করেছে।

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মাইলাম ছাড়াও আরেকজন পূর্বতন মার্কিন কূটনীতিক জন এফ. ড্যানিলোইচ উপস্থিত ছিলেন। ড্যানিলোইচ বর্তমানে মার্কিন-ভিত্তিক অলাভজনক মানবাধিকার সংগঠন ‘রাইট টু ফ্রিডম’-এর সভাপতি ও নির্বাহী পরিচালক।

নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মাইলাম বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে স্বৈরশাসন থেকে গণতন্ত্রে পরিবর্তনের ক্ষমতা সমাজের রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ এক ‘আদর্শ পরিস্থিতিতে’ রয়েছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জনগণের সম্মতিক্রমে দেশকে গণতন্ত্রের দিকে নেতৃত্ব দিতে চান বলে তিনি অধ্যাপক ইউনূসের কাছ থেকে জেনেছেন। মাইলামের মতে, ২০১৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি এবং গণতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সময় কূটনৈতিক পন্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে, যার ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক কি হবে তা পূর্বাভাস করা কঠিন।

ড্যানিলোইচ বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভুল অবস্থানের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভুল পক্ষে ছিল।’ ড্যানিলোইচ বাংলাদেশে রাজনৈতিক জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং কখনো কখনো দুর্বল সিভিল প্রশাসনের মধ্যে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা স্বীকার করেন।

জুলাইয়ের অভ্যুত্থান থেকে শিক্ষা কি জানতে চাইলে, ড্যানিলোইচ বলেন, সংশ্লিষ্টদের অতীতে কোথায় কি ভুল হয়েছে তা খুঁজে বের করতে হবে। ঢাকায় মার্কিন কূটনীতিক হিসেবে তার অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে ড্যানিলোইচ বলেন, ২০০৭-০৮ সালে সামরিক-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তারা ভুল করে সংস্কারের পরিবর্তে নির্বাচনের ওপর অতিরিক্ত জোর দিয়েছিলেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতির উল্লেখ করে ড্যানিলোইচ আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ‘বাংলাদেশ প্রথম’ নীতি গ্রহণ করবে এবং শাসন ও কূটনীতিতে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য মার্কিন তহবিল সংক্রান্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিবৃতি দুই দেশের সম্পর্ক ধ্বংস করতে চায় এমন লোকজনের প্রচারণা মাত্র। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছিল।’

সিজিএস-এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে বিভিন্ন বিদেশি মিশনের কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী নেতা, আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের সদস্য, সাংবাদিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।