দুদকের জালে ১৮,৬০৭ কোটি টাকার সম্পত্তি

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত আগস্ট ২০২৪ থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে দুর্নীতির সন্দেহভাজনদের কাছ থেকে প্রায় ১৮,৬০৭ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করেছে। দেশের বিভিন্ন আদালতের ১০৯টি আদেশের ভিত্তিতে এসব সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের লোগো

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুদক দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই ব্যাপক অভিযান শুরু করে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যারা বিগত ১৫ বছরের শাসনামলে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযান চলছে।

জব্দকৃত সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে জমি, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, গাড়ি, স্বর্ণ, ব্যাংক হিসাবে জমা অর্থ, সঞ্চয়পত্র, বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার, মার্কিন ডলার, ইউরো এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র।

দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত সাত মাসে দেশে-বিদেশে দুর্নীতির সন্দেহভাজনদের ১৮,৬০৭ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১,০৩০টি ব্যাংক হিসাবে ৮১৭.১৪ কোটি টাকা, ৯টি সঞ্চয়পত্রের ১.৪৮ কোটি টাকা, ৮,৭১৩ কোটি টাকার শেয়ার, ১,৬৯,৩০০ মার্কিন ডলার (২.০৪ কোটি টাকা) এবং ৫৫,০০০ ইউরো (৬৯.৯৫ লাখ টাকা) অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও ৬৬০.৩ গ্রাম স্বর্ণ এবং ৯টি বেনিফিশিয়ারি ওনার অ্যাকাউন্টে ৯.১৬ কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে। বিভিন্ন আদালতের আদেশে বিদেশেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ৭,১৩,৯৪০ মার্কিন ডলার এবং ২৮.৬৯ লাখ ইউরো।

ঢাকা মেট্রোপলিটন স্পেশাল সিনিয়র জজ আদালত গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন ৮,১৩৩ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ করার আদেশ দিয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচারের অভিযোগে তদন্ত চলছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আদালতের ৫৫টি আদেশের ভিত্তিতে ৮৮৫ কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৬৯০.৮ কোটি টাকা মূল্যের ১৯১.৮০ একর জমি, ৪৪.০৩ কোটি টাকা মূল্যের ২৮টি বাড়ি, ১৭.৩৫ কোটি টাকা মূল্যের ৩৮টি অ্যাপার্টমেন্ট এবং ২.৯৩ কোটি টাকা মূল্যের ২৩টি গাড়ি।

এছাড়াও, দুদক গত সাত মাসে ৫৮২টি অ্যাপার্টমেন্ট বা বাণিজ্যিক স্থান এবং ২৩টি কোম্পানির কাছ থেকে ৮,৮৮,৪৭৪ মার্কিন ডলার এবং বিদেশে ৮,৬২,০৪৮ ইউরো জব্দ করেছে।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম জানান, মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দুর্নীতির সন্দেহভাজনদের জব্দকৃত সম্পত্তি হস্তান্তর বা বিক্রি করতে নিষেধ করা হয়েছে। দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্পত্তি জব্দের এই বৃদ্ধি দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের তদন্ত এবং দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনার ব্যাপক প্রচেষ্টার একটি অংশ।