বাংলাদেশে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত

আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানীরা ২০২৩ সালে সংগৃহীত রোগীর নমুনা থেকে পাঁচটি জিকা ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা শনাক্ত করেছেন। এটি বাংলাদেশে জিকা আক্রান্ত রোগীদের একটি ক্লাস্টারের প্রথম শনাক্তকরণ। এই তথ্য সোমবার আইসিডিডিআর,বি'র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

আইসিডিডিআরবির লোগো

পাঁচজন রোগীই ঢাকার মহাখালী এলাকার এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে বসবাস করতেন এবং গত দুই বছরে তাদের কারোরই বিদেশ ভ্রমণের কোনো ইতিহাস ছিল না। তাদের সকলের পরীক্ষা প্রায় এক মাসের ব্যবধানে করা হয়েছিল, যা ইঙ্গিত দেয় যে তারা একই সংক্রমণ শৃঙ্খলার অংশ ছিল। পাঁচজন জিকা আক্রান্ত রোগীর একজন ডেঙ্গু ভাইরাসেও আক্রান্ত ছিলেন — বাংলাদেশে এই সহ-সংক্রমণ প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয়েছে।

আইসিডিডিআর,বি'র ডায়াগনস্টিক সুবিধায় আসা জ্বর এবং জিকা ভাইরাসের অন্যান্য লক্ষণযুক্ত ১৫২ জন রোগীর নমুনায় পিসিআর-ভিত্তিক পরীক্ষা চালানো হয়। এই নমুনাগুলির মধ্যে পাঁচটিতে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

জিকা ভাইরাস সংক্রমণ প্রায়শই লক্ষণবিহীন থাকে, মাত্র ২০ শতাংশ সংক্রমিত ব্যক্তির মধ্যে লক্ষণীয় জ্বর হয়। মাথাব্যথা, জ্বর এবং পেশী ব্যথা, যখন উপস্থিত থাকে, তখন ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ার মতোই হয়, যার ফলে রোগ নির্ণয় জটিল হয়ে পড়ে।

জিকা ভাইরাস গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ। এই ভাইরাস গর্ভস্থ শিশুর মাইক্রোসেফালিসহ গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, যা শিশুর মৃত্যু এবং বুদ্ধিগত অক্ষমতার ঝুঁকি বাড়ায়। সাধারণত সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য জিকা ভাইরাস বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও, গর্ভবতী মহিলাদের সুরক্ষার জন্য ভাইরাসের নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জিকা ভাইরাস কেবল মশার মাধ্যমেই নয়, যৌন মিলন, রক্ত সঞ্চালন, প্রসবকালীন মা থেকে সন্তানে এবং অন্যান্য শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন জিকা-প্রভাবিত দেশে কর্মরত বাংলাদেশি অভিবাসীরা ভাইরাসটি বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার একটি সম্ভাব্য মাধ্যম হতে পারে। তাই, জিকা-প্রভাবিত দেশ থেকে আসা ভ্রমণকারীদের নিয়মিত জিকা ভাইরাস পরীক্ষা, আরও ডায়াগনস্টিক সুবিধা এবং জাতীয় পর্যায়ে নিয়মতান্ত্রিক নজরদারি এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে জরুরী।

বাংলাদেশের উষ্ণ আবহাওয়া এবং দীর্ঘ বর্ষাকাল, এডিস মশার প্রজননের জন্য আদর্শ পরিবেশ। এই মশা ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং জিকার মত রোগের বাহক। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ডেঙ্গুর মহামারী বাংলাদেশের জন্য একটি বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে উঠে দাঁড়িয়েছে, ২০২৩ সালে রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

চিকুনগুনিয়া এবং জিকার মতো অন্যান্য উদীয়মান ভাইরাল রোগ বিশ্বব্যাপী মহামারী সৃষ্টি করেছে এবং বাংলাদেশেও এদের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। তাই, জিকা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি এবং সচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য।