ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করবে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ভারত, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই তিনটি দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখা জাতীয় স্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

মো. তৌহিদ হোসেন

উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জোর দিয়ে বলেন, ‘ভারত, চীন ও আমেরিকার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে অবশ্যই এই তিনটি দেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখব।’

ভারত ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের এই ভারসাম্যপূর্ণ কূটনৈতিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরও জানান, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গত ছয় মাসে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিদেশি বন্ধুদের মধ্যে প্রাথমিক শঙ্কা থাকলেও, সরকারের পদক্ষেপ এবং অর্জনের মাধ্যমে তাদের আশ্বস্ত করা সম্ভব হয়েছে। অধ্যাপক ইউনূসের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক বজায় রাখার কোন যৌক্তিকতা নেই।

তিনি উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক টানাপোড়েন অবস্থায় রেখেছিল, কিন্তু বর্তমান সরকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। পাকিস্তানও সম্পর্ক উন্নয়নের আগ্রহ প্রকাশ করেছে যা বাংলাদেশ সরকার সাদরে গ্রহণ করেছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে এবং এই স্বার্থ সুরক্ষিত করাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য হিসেবে সমুদ্র যোগাযোগ পুনরায় চালু করা উভয় দেশের জন্যই লাভজনক বলে মনে করেন তৌহিদ হোসেন।

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও দুই দেশের মধ্যে কিছু অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়গুলো নিয়ে স্থির থাকলে কোনো পক্ষই লাভবান হবে না।’

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে কিছুটা অস্বস্তি বিরাজ করছে বলে স্বীকার করেছেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এই অস্বস্তির কথা অস্বীকার করার কোনো অর্থ হয় না।’ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত অবস্থানের সময় উদ্ভূত জটিলতাও এই অস্বস্তির অন্যতম কারণ বলে তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। সম্প্রতি তার বেইজিং সফরে দ্বিপাক্ষিক বিষয়, উন্নয়ন প্রকল্প এবং বাণিজ্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান। ঢাকা চীনকে তার নীতিগত অবস্থান সম্পর্কে আশ্বস্ত করতে সক্ষম হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে এবং আমরা আশাবাদী যে, সম্পর্ক সঠিক পথে এগোবে ও অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে।’ পূর্ববর্তী সকল সরকার চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং ‘এটি অব্যাহত রাখাই আমাদের লক্ষ্য’ বলেও তিনি জানান।

পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বেইজিংয়ের সঙ্গে তার সম্পর্কের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও তিনি স্পষ্ট করে দেন। চীন দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে বলেও উপদেষ্টা জানান।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে তেমন কোনো বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন না বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থিতিশীল থাকবে।

সূত্র: বাসস