সানডে টাইমস: ‘মুখ বন্ধ করতে’ ব্রিটিশ আইনজীবীর পরামর্শ চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা

গণমাধ্যমে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ব্রিটিশ আইনজীবী ডেসমন্ড ব্রাউন কেসির কাছ থেকে আইনি পরামর্শ চেয়েছিল বলে সানডে টাইমসের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। শেখ হাসিনার ঢাকার তৎকালীন সরকারি বাসভবন (গণভবন) থেকে উদ্ধার হওয়া কিছু কাগজপত্র থেকে এই তথ্য উঠে এসেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ডেসমন্ড ব্রাউন কেসি ও শেখ হাসিনা

সানডে টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা ব্রাউনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মানহানির মামলায় বিশেষজ্ঞ এই আইনজীবী স্যার এলটন জন এবং ভিক্টোরিয়া বেকহ্যামের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ব্রাউন পরবর্তীতে তাদেরকে সলিসিটর জেরেমি ক্লার্ক-উইলিয়ামসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন, যিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা পরিচালনা করতে পারেন। পরের মাসে ব্রাউন এবং ক্লার্ক-উইলিয়ামস উভয়ই হাসিনার প্রতিনিধিদের পরামর্শ প্রদান করেন।

আল জাজিরার ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ নামের একটি তথ্যচিত্র প্রচারের পর এই বিতর্কের সূত্রপাত, যেখানে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরা হয়।

তথ্যচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ভাইয়ের দুর্নীতির কথা স্বীকার করার দৃশ্য প্রচারিত হয়। ইউটিউবে ১০ মিলিয়ন বার দেখা এই তথ্যচিত্রটি আন্তর্জাতিক পুরষ্কারও পেয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আজিজ আহমেদ এবং তার ভাইকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। বাংলাদেশ সরকার এই তথ্যচিত্রকে ‘মিথ্যা, মানহানিকর এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করে।

তথ্যচিত্র প্রচারের পর তথ্যদাতাদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। তথ্যদাতা জুলকারনাইন সায়ের খানের ভাইকে আক্রমণ করা হয়। নিরাপত্তার আশঙ্কায় কিছু তথ্যদাতা দেশ ত্যাগ করেন।

প্রাপ্ত কাগজপত্র অনুযায়ী, হাসিনার সরকার আল জাজিরা এবং তথ্যচিত্রের সঙ্গে জড়িত ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তা করে। বার্গম্যান, যিনি হাসিনা সরকারের একজন সমালোচক, ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন।

শেষ পর্যন্ত, বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যে মামলা দায়ের না করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিবর্তে সরকার তথ্যচিত্রটি ইউটিউব এবং ফেসবুক থেকে সরানোর চেষ্টা করে, যা ব্যর্থ হয়।

গত বছর ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন এবং ভারতে পালিয়ে যান। বিক্ষোভকারীরা তার বাসভবন থেকে যেসব কাগজপত্র উদ্ধার করে, তার মধ্যেই ব্রাউন এবং ক্লার্ক-উইলিয়ামসের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য পাওয়া যায়।

ব্রাউন ‘ক্যাব র‍্যাঙ্ক’ নিয়মের কথা উল্লেখ করে বলেন, আইনজীবীদের ক্লায়েন্টের সুনাম নির্বিশেষে মামলা গ্রহণ করতে হয়। তিনি প্রাথমিক সভা এবং পরামর্শের কথা স্বীকার করেন, তবে বলেন যে পরে কোনো মামলা হয়নি। ক্লার্ক-উইলিয়ামস মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

এই ঘটনা ‘লাবেল ট্যুরিজম’ নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে, যেখানে সমালোচনা দমন করতে যুক্তরাজ্যের আদালত ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়।