সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আজ সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ আদালতের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির এই নির্দেশনা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহ থেকে কাউন্সিল তদন্ত শুরু করবে।

ছবি - সংগৃহীত

সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি এই নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে ঠিক কতজন বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত হবে তা এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

এর আগে, হাইকোর্টের ১২ জন বিচারপতির বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্ত শেষ করে কাউন্সিল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছিল। গত ১৫ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন তাদের ওয়েবসাইটে এই তথ্য প্রকাশ করে। নিয়ম অনুযায়ী, এরপর রাষ্ট্রপতি কাউন্সিলের সুপারিশ পর্যালোচনা করেন।

এ প্রসঙ্গে আজ সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানিয়েছে, সংবিধানের ৯৬ (৫) (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে নির্দেশ দিয়েছেন।

গত ৪ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে কয়েকজন বিচারপতির আচরণবিধি সংক্রান্ত একটি প্রাথমিক তদন্ত চলছে। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিও হয়েছে।

১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী, উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা প্রাথমিকভাবে সংসদের হাতে ছিল। তবে ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি, চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এই ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির কাছে স্থানান্তরিত হয়। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে, পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে এই ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে প্রদান করা হয়।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা আবার সংসদের কাছে ফিরিয়ে আনা হয়। বিলটি পাস হওয়ার পর একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। শুনানির পর, ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে।

সম্পূর্ণ রায় প্রকাশের পর, ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি রাষ্ট্র আপিল করে। ২০১৭ সালের ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৭ জন বিচারপতির আপিল বিভাগীয় বেঞ্চ শুনানি করে হাইকোর্টের রায় সর্বসম্মতিক্রমে বহাল রাখে।

৭৯৯ পৃষ্ঠার সম্পূর্ণ রায় ২০১৭ সালের ১ আগস্ট প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর, আপিল বিভাগে রায়ের পুনর্বিবেচনার আবেদন করে রাষ্ট্র।

২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর, আপিল বিভাগ পুনর্বিবেচনার আবেদন নিষ্পত্তি করে। এরপর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়।

সেই সময় অন্তত ১৫ জন বিচারককে বিচারিক দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে তিনজন বিচারক ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন এবং একজন অবসর গ্রহণ করেছেন।

কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে, কাউন্সিল পর্যালোচনা করে অভিযোগটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠায়। প্রধান বিচারপতি এবং দুইজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে নিয়ে জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয়।