চার সন্তান হারানো মায়ের আর্তনাদ: আসাদের বিচার চাই

সিরিয়ার কুখ্যাত সেদনায়া কারাগারে সাবেক স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদ ও তার পরিবারকে শাস্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ৬০ বছর বয়সী এক সিরীয় মা। গত সরকারের শাসনামলে এই মা তার চার সন্তানকে হারিয়েছেন।

সেদনায়া কারাগার

দামেস্কের বাসিন্দা সেমিরা সালিহ উগলা জানান, ২০১২ সালে আসাদবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অভিযোগে তার তিন সন্তান হানি, আইহাম ও বেতুল হিশমানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। পরে হানির মৃত্যু সংবাদ পান তিনি। এরপর চোখের সামনেই রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় তার অন্য তিন সন্তান আহমাদ, মোহাম্মদ ও আইমেন। কারাগারে থাকা আইহাম ও বেতুলের কোনো খোঁজ এখনও পাননি তিনি।

এসব মর্মান্তিক ঘটনার পর দুই মেয়েকে নিয়ে সিরিয়া ছেড়ে তুরস্কে আশ্রয় নেন উগলা। গত এক যুগ ধরে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শানলিউরফা প্রদেশে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছেন তিনি। জীবন ধারণের জন্য কঠিন সংগ্রাম করলেও সিরিয়ার দীর্ঘদিনের বাথ শাসনের পতনে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা এখনো তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।

সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উগলা বলেন, সেদনায়া কারাগারে বন্দিদের ওপর অকল্পনীয় নির্যাতন চালানো হতো। বন্দিদের নির্যাতন করতে সেখানে অ্যাসিড ট্যাংক, প্রেস মেশিনসহ নানা ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো।

“আমি আশা করেছিলাম হানির সাথে আবার দেখা হবে।”, বলেন উগলা। “আসাদ সরকারের অত্যাচারে স্মৃতিশক্তি হারালেও আমি তার সঙ্গে সাক্ষাতের আশায় অপেক্ষা করতাম। কিন্তু তার মৃত্যু সংবাদ পাই। অন্য দুই সন্তানের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এখনও আমার অজানা।”

চোখের সামনে তার অন্য তিন সন্তানের গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও উল্লেখ করেন উগলা। তিনি বলেন, আসাদের সেনারা তার এক প্রতিবন্ধী সন্তানসহ তিন ছেলেকে বাইরে টেনে নিয়ে রাস্তায় আরও ছয়জনের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে।

সেমিরা উগলা এখন তার নিখোঁজ দুই সন্তানের সন্ধান চান। একইসঙ্গে তিনি তার সন্তানদের হত্যার অভিযোগে সেদনায়া কারাগারে বাশার আল-আসাদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিচার কামনা করেন।

বাশার আল-আসাদের রাশিয়া যাওয়ার ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করে উগলা বলেন, ‘আমরা আসাদের পলায়ন মেনে নেব না। আমরা তাকে এবং তার পরিবারকে সেদনায়া কারাগারে বন্দী দেখতে চাই। আমরা তার ফাঁসিও মানি না। আমরা চাই যে আমাদের সন্তানরা যে কষ্ট সহ্য করেছে সে-ও একই কষ্টের মুখোমুখি হোক।’

আসাদ সরকারের পতনের সময় উগলা তুরস্কের সানলিউরফার রাবিয়া স্কোয়ারে উদযাপনে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘সে সময় মনে হয়েছিল পৃথিবী আমাদের হয়ে গেছে। এখন আমরা ন্যায়বিচারের সাথে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষা করছি।’

সূত্র: মিডলইস্টমনিটর ও আনাদোলু এজেন্সি