ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে জিনপিংকে আমন্ত্রণ!

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে নানা পদে বৈরিতা কারও অজানা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম মেয়াদে চীনের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধ শুরু করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই ট্রাম্পই এবার নিজের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। চীনের প্রতি উস্কানিমূলক বক্তব্য ও শুল্ক যুদ্ধের ইতিহাস সত্ত্বেও জিনপিংকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ট্রাম্প। খবর আল জাজিরার।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শি জিনপিং

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা নিতে যাচ্ছেন আগামী ২০ জানুয়ারি। এই অভিষেক অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট জিনপিংকে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে ট্রাম্প শিবির।

ট্রাম্পের নিয়োগকৃত প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বৃহস্পতিবার রক্ষণশীল টিভি চ্যানেল ফক্স নিউজের এক অনুষ্ঠানে চীনে প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণের খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার প্রচেষ্টা হিসাবে আমন্ত্রণ করা হয়েছে।

ফক্স অ্যান্ড ফ্রেন্ডস প্রোগ্রামে লিভিট বলেন, এটি হল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এমন একটি উদাহরণ যেগুলো শুধু আমাদের মিত্র নয়, আমাদের প্রতিপক্ষ ও আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে খোলামেলা সংলাপের পথ তৈরি করবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের কোনো নেতার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া নজিরবিহীন হবে। দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশক ধরে সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণেই এমনটি ঘটেছে।

ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের চীনা বিশেষজ্ঞ স্কট কেনেডি বলেন, এটা কূটনৈতিক নাটক ছাড়া কিছুই না। শি জিনপিংকে বাদ দিন, অন্য কোনো রাষ্ট্রপ্রধানও মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শি জিনপিংয়ের ট্রাম্পের আমন্ত্রণ গ্রহণ করার সম্ভাবনা নেই।

ট্রাম্পের আমন্ত্রণ সম্পর্কে একটি ব্রিফিংয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, এই মুহূর্তে এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।

অন্যদিকে এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও কূটনীতি বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্যানি রাসেল বলেন, শি জিনপিং যদি আমন্ত্রণ গ্রহণও করেন, তাহলে সেটিকে চীনা প্রেসিডেন্টের জন্য ‘একজন বিদেশী নেতার বিজয় উদযাপন’ হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

ড্যানি রাসেল বলেন, তবে আপনি কি কল্পনা করতে পারেন যে শি জিনপিং ওয়াশিংটন ডিসিতে মঞ্চের পায়ের কাছে বসে এক মনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে তাকিয়ে তার উদ্বোধনী ভাষণ শুনছেন!

ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত চীনের সঙ্গে একটি বাণিজ্য যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন, ওই সময় দুই দেশ একে অপরের আমদানিতে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করে গেছে।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা ২০১৯ সালের একটি প্রতিবেদনে সতর্কতা জারি করেছিল, এই বাণিজ্য যুদ্ধ ‘উভয় দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে’। কেননা, শুল্কের ব্যয় শেষপর্যন্ত ভোক্তা-গ্রাহকের ওপরই চাপিয়ে দেওয়া হয়।

এছাড়া কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন ট্রাম্প চীনের সরকারের সঙ্গে বাগযুদ্ধও চালিয়ে গেছেন। করোনা ভাইরাসকে ট্রাম্প বরাবরই ‘চায়না ভাইরাস’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। করোনার বিস্তারের জন্যও চীনকে দোষারুপ করেছেন ট্রাম্প। যদিও ট্রাম্পের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে নিন্দা ও কলঙ্কজনক বলে অভিহিত করেছেন জিনপিং।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদেও চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা বাড়াতে পারে। কেননা, এরইমধ্যে ট্রাম্প সিনথেটিক ড্রাগ ফেন্টানাইলের ব্যবসা রোধে আর কিছু না করলেও চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার ঘোষণা দিয়েছেন।