আলোচনার আগে যুদ্ধবিরতি চান জেলেনস্কি, লন্ডনে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আজ

রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার পূর্বশর্ত হিসেবে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অবস্থান স্পষ্ট করেন। খবর আরব নিউজের।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি

এদিকে, ইউক্রেন সংকট নিরসনে আজ বুধবার লন্ডনে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে কিয়েভের পক্ষ থেকে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

কিয়েভের সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর আমরা যেকোনো ফরম্যাটে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।’

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন সংকট দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতিও দেন। তবে ক্ষমতায় ফেরার পর তিন মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে যুদ্ধ থামাতে রাজি করাতে পারেননি। গত সপ্তাহান্তে ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছিলেন যে, এই সপ্তাহেই একটি শান্তি চুক্তি হতে পারে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কার্যকর যুদ্ধবিরতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ দ্রুত সমাধানের বিষয়ে সতর্ক করে বলেছেন, ‘এত জটিল একটি বিষয়ে দ্রুত কোনো সমাধান আশা করা উচিত নয়। কারণ দ্রুত সময়সীমা নির্ধারণ করে একটি কার্যকর শান্তি চুক্তি করা অসম্ভব।’

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে এবং উভয় পক্ষের হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

গত মাসে প্রেসিডেন্ট পুতিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের পক্ষ থেকে দেওয়া সম্পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে ইস্টারের সময় তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। যদিও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, এই সময়ে সহিংসতা কিছুটা কমলেও সোম ও মঙ্গলবার রাশিয়া পুনরায় বেসামরিক এলাকায় হামলা চালিয়েছে।

কিয়েভ এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা পুতিনের এই যুদ্ধবিরতিকে 'প্রচারণা' এবং ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-নোয়েল ব্যারোর মতে, ট্রাম্পকে শান্ত রাখার একটি ‘মার্কেটিং কৌশল’ হিসেবে দেখছে।

কিয়েভের এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে, লন্ডনে বুধবারের বৈঠকে ইউক্রেনের মিত্র রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে এবং সেখানে মূল লক্ষ্য থাকবে 'একটি নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি' প্রতিষ্ঠা করা। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সময়ের অভাবে এই বৈঠকে অংশ নিতে পারবেন না বলে জানা গেছে।

জেলেনস্কি এক বিবৃতিতে আরও জানিয়েছেন যে, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। গত সপ্তাহে প্যারিসে রুবিও একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পেশ করলেও ওয়াশিংটনের ধৈর্য্য কমে আসছে বলে তিনি সতর্কবার্তা দেন। ইউক্রেনের অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, মার্কিন মধ্যস্থতায় কোনো সমাধান হলে সেটি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার অনুকূলেই যেতে পারে।