গতিসীমা লঙ্ঘনের জরিমানা ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা!

গতিসীমা ঘণ্টায় ৩০ মাইল। তবে ফিনল্যান্ডের অন্যতম শীর্ষ ধনী অ্যান্ডার্স উইকলফ ওই সড়কে গাড়ি চালাচ্ছিলেন ঘণ্টায় ৫০ মাইল গতিতে। এজন্য তাকে জরিমানা করা হয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ইউরো, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এমন চড়া জরিমানায় আক্ষেপ নেই উইকলফের। তিনি আশা করছেন, সরকার স্বাস্থ্য খাতের বাজেটে যে কাটছাঁটের পরিকল্পনা নিয়েছে, তার দেওয়া জরিমানা সে শূন্যতা পূরণে কাজ লাগবে।

ইউরোপিয়ান রোড সেফটি অবজারভেটরির মতে, ফিনল্যান্ডে গাড়িচালকরা আইনের প্রতি অধিকতর যত্নশীল

ফিনল্যান্ডের আল্যান্ড আইল্যান্ডের জারসভোগান থেকে মারিশমন শহরে যাচ্ছিলেন অ্যান্ডার্স উইকলফ। এরইমধ্যে পুলিশ তার গাড়ি থামিয়ে জরিমানার টিকেট ধরিয়ে দেয়। উইকলফ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঘটনার কয়েক মিনিট আগেও তিনি যে সড়কে ছিলেন, সেখানে গতিসীমা ছিল ঘণ্টায় ৫০ মাইল। হঠাৎ বাঁক বদলের পর ৩০ মাইল গতিসীমার সড়কে চলছেন, এটা তিনি বুঝতে পারেন। কিন্তু গাড়ির গতি কমিয়ে আনার আগেই পুলিশ এসে হাজির হয়।

নিয়া আল্যান্ড পত্রিকাকে উইকলফ বলেন, এ ঘটনায় আমি সত্যিই অনুতপ্ত। আশা করছি জরিমানার মাধ্যমে আদায়কৃত টাকা ইতিবাচকভাবে ব্যয় হবে। আমি শুনেছি যে তারা (সরকার) স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেড়শ কোটি ইউরো কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কাজেই আশা করি এই (জরিমানার) টাকা সেই শূন্যতা পূরণে কাজে আসবে।

আল্যান্ড আইল্যান্ডের অধিবাসী অ্যান্ডার্স উইকলফ ফিনল্যান্ডের শীর্ষ ধনীদের একজন। উইকলফ হোল্ডিংস নামে বিরাট ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের কর্ণধার তিনি। লজিস্টিকস, রিয়েল এস্টেট, ট্রেডিং ও অন্যান্য ব্যবসা রয়েছে তার।

অ্যান্ডার্স উইকলফের এত বেশি পরিমাণ অর্থ জরিমানা হবার কারণ হলো ফিনল্যান্ডের ডে-ফাইন সিস্টেম। ১৯২১ সাল থেকে ফিনল্যান্ডে এ ব্যবস্থা প্রচলিত। পরবর্তীকে ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশ ডে-ফাইন সিস্টেম প্রবর্তন করেছে।

ডে-ফাইন সিস্টেমে জরিমানার পরিমাণ নির্ধারিত হয় ব্যক্তির আয়ের ওপর ভিত্তি করে। একজন ব্যক্তির বার্ষিক বা মাসিক আয় থেকে হিসাব করে তার দৈনিক আয়ের পরিমাণ নিরূপণ করা হয়। দৈনিক নীট আয়ের অর্ধেক বা ৫০ শতাংশকে ওই ব্যক্তির দৈনিক ব্যয়যোগ্য আয় বিবেচনা করা হয়।

অ্যান্ডার্স উইকলফের দৈনিক ব্যয়যোগ্য আয়কে ভিত্তি করে তাকে জরিমানা হয়েছে। যেহেতু তিনি ৩০ মাইল গতিসীমার সড়কে ৫০ মাইল গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন, তাই তার গতিসীমা অতিক্রমের পরিমাণ ২০ মাইল। উইকলফের এক দিনের ব্যয়যোগ্য আয়কে ২০ দিয়ে গুন করে তার প্রদেয় মোট জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অ্যান্ডার্স উইকলফ এবারই প্রথম গতিসীমা লঙ্ঘনের জন্য চড়া মাশুল গুনছেন, এমন নয়। ২০১৮ সালে ট্রাফিক পুলিশ গতিসীমা লঙ্ঘনের জন্য তাকে ৬৩ হাজার ইউরো (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী ৭৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা) জরিমানা করে। এর আগে ২০১৩ সালে একই কারণে তিনি জরিমানা গুনেন ৯৫ হাজার ইউরো (১ কোটি ১১ লাখ টাকা)।

ডে-ফাইন সিস্টেমে ফিনল্যান্ডে মোটা অঙ্কের জরিমানা দেওয়ার রেকর্ড অ্যান্ডার্স উইকলফের একার নয়। টেলিকম জায়ান্ট নকিয়ার সাবেক বস আনসি ভানজোকি নির্ধারিত গতিসীমার ওপর মোটরসাইকেল চালিয়ে জরিমানা গুনেছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ইউরো (১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা)। ৫০ মাইল গতিসীমার সড়কে ৬৪ মাইলে গাড়ি চালিয়ে ৫৪ হাজার ইউরো (৬৩ লাখ টাকা) জরিমানা দিয়েছেন আরেক ফিনিশ ধনকুবের রেমিয়া কিসলা।

ডে-ফাইন সিস্টেমে সর্বোচ্চ জরিমানা আদায়ের রেকর্ড সুইজারল্যান্ডের। নির্ধারিত গতিসীমার চেয়ে ১০৫ মাইল বেশি গতিতে গাড়ি চালানোর অপরাধে সুইজারল্যান্ডে এক গাড়িচালকের কাছ থেকে ১০ লাখ ৯১ হাজার ৩৪০ ডলার (১১ কোটি ৮৩ লাখ ২৩ হাজার টাকা) জরিমানা আদায় করা হয়। দৈনিক ৩ হাজার ৬০০ সুইস ফ্রাঙ্ক হারে ৩০০ দিনে ওই জরিমানা পরিশোধ করতে হয়।