ট্রাম্পের ‘ইতিহাস-জ্ঞান’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে চাকরি খোয়ালেন রাষ্ট্রদূত

লন্ডনে চ্যাথাম হাউসে এক অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইতিহাসের উপর দখল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন নিউজিল্যান্ডের হাইকমিশনার ফিল গফ। বুধবারের ওই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই চাকরি হারাতে হয়েছে গফকে। খবর বিবিসি ও আল জাজিরার।

যুক্তরাজ্যে নিউজিল্যান্ডের হাইকমিশনার ফিল গফ

নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানায়, যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত নিউজিল্যান্ডের হাইকমিশনারকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইতিহাস-জ্ঞান নিয়ে ফিল গফের প্রকাশ্য মন্তব্য নিউজিল্যান্ড সরকারের দৃষ্টিতে ওই পদে তাকে ‘অযোগ্য’ করে তুলেছে।

লন্ডনে চ্যাথাম হাউসে গত বুধবার এক প্যানেল আলোচনায় ইউক্রেন যুদ্ধ সমাপ্তি ও রাশিয়ার সাথে শান্তি বজায় রাখার বিষয়ে কথা বলছিলেন ফিনিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিনা ভালটোনেন। এসময় নিউজিল্যান্ডের হাইকমিশনার ফিল গফ আলোচক এলিনার কাছে একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন।

গফ বলেন, ১৯৩৮ সালে অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে মিউনিখ চুক্তির পর হাউস অফ কমন্সে উইনস্টন চার্চিল যে ভাষণটি দিয়েছিলেন, সেটি পুনরায় পড়েছি আমি, তাতে জার্মানিকে চেকোস্লোভাকিয়ার কিছু অংশ দখল করার অনুমতি দেওয়া হয়।

গফ বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে চার্চিলের আবক্ষ মূর্তিটি ওভাল অফিসে পুনঃস্থাপন করেছেন। কিন্তু তুমি কি মনে করো তিনি সত্যিই ইতিহাস বোঝেন? গফের এ প্রশ্নে দর্শকদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে যায়।

গফের এমন মন্তব্য এমন সময়ে করা হয়েছে, যখন ট্রাম্প প্রশাসনের একের পর এক বিরুপ আচরণে ইউরোপীয় মিত্রদের ভেতরে নানা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্প বা তার প্রশাসনের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগেই ব্যবস্থা নিলো পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স বলেন, এটা গুরুতরভাবে দুঃখজনক যে গফের মন্তব্যের জন্য তার বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছি এবং তিনি যদি অন্য কোনও দেশের নেতা সম্পর্কে এমন মন্তব্য করতেন, তাতেও এটিই করতে হতো। কেননা, গফের মন্তব্য হতাশাজনক এবং রাষ্ট্রদূতের অবস্থানকে ‘অযোগ্য’ করে তুলেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার্স বলেন, যখন আপনি কোনো পদে থাকেন, তখন আপনি সরকারের মতামত এবং বর্তমান নীতির প্রতিনিধিত্ব করেন - আপনি স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারবেন না, কেননা আপনি নিউজিল্যান্ডের প্রতিনিধিত্বকারী মুখ।

নিউজিল্যান্ডের লেবার পার্টির সাবেক নেতা এবং অকল্যান্ডের সাবেক মেয়র গফকে ২০২২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের প্রশাসনের সময় এই পদে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তার আগে তিনি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদেও দায়িত্ব সামলেছেন। এখন রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার মেয়াদ ২০২৫ সালের শেষের দিকে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তারিখটি এগিয়ে আনা হয়েছে।

তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে, নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক বলেছেন, নিউজিল্যান্ডের একজন অত্যন্ত সম্মানিত সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বরখাস্ত করার জন্য এটি একটি খুব সূক্ষ্ম অজুহাত।