ইউক্রেনের বাঁধে হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলছে যুক্তরাজ্য

রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চল খেরসনের ‘নোভায়া কাখোভকা’ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ মঙ্গলবার ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এতে বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ইউরোপের বৃহত্তম পরমাণু কেন্দ্রও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এই কাজের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে একে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। খবর রয়টার্স।

কাখোভকা বাঁধ

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি টুইটারে লেখেন, কাখোভকা বাঁধ ধ্বংস করা এটি জঘণ্য কাজ। রাশিয়া একতরফাভাবে ইউক্রেনের বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের হামলা যুদ্ধাপরাধের মধ্যে পড়ে। ইউক্রেনের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এই বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে যুক্তরাজ্য প্রস্তুত রয়েছে।

এদিকে এই বাঁধ ধ্বংসের ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করে পরস্পরকে দোষারোপ করছে ইউক্রেন ও রুশ কর্তৃপক্ষ। ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখল করে নেওয়া ক্রিমিয়ার জন্য বাঁধটি ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ইউক্রেনের জাপোরোঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লি শীতলীকরণের জন্যও পানির জোগান নিশ্চিত হয় এই বাঁধের মাধ্যমে। বাঁধটি ধ্বংসের কারণে এরই মধ্যে ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পরমাণুকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে ভীতি তৈরি হয়েছে।

প্লাবিত হচ্ছে বিস্তীর্ণ ভূমি

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে বাঁধটি ভেঙে পুরো এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করে। ডিনিপ্রো নদীর ওপর নির্মিত এই বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় নদীর ভাটির দিকে থাকা জনবসতিগুলো বন্যার হুমকিতে পড়ে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত তাদের অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।

১৯৫৬ সালে ডিনিপ্রো নদীর ওপর ৩০ মিটার উঁচু এবং তিন দশমিক দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধটি তৈরি করা হয়েছিল। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর বাঁধটি রুশ দখলে চলে যায়। গত অক্টোবরে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছিলেন, মস্কো কাখোভকা বাঁধ উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। মঙ্গলবার সত্যি সত্যিই বাঁধটি ধসে পড়ে।

ইউক্রেনসহ তাদের মিত্ররা এর জন্য রাশিয়াকে দায়ী করলেও রাশিয়া উল্টো এর জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করছে। কারণ বাঁধটি রাশিয়ার দখলে থাকা ক্রিমিয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে কাখোভকা বাঁধ ধ্বংসকে কিয়েভের নাশকতা হিসেবেই দেখছে মস্কো।

ক্রেমলিনের মুখমাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, ইউক্রেনই এই নাশকতা ঘটিয়েছে। তাদের এই সন্ত্রাসী ঘটনার জন্য এ এলাকার লাখো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রকৃতিতেও নানা ধরনের নেতিবাচক পরিণতি দেখা দেবে।

পেসকভের আগে খেরসনে রাশিয়া নিযুক্ত গভর্নর ভøাদিমির সালদো দাবি করেন, আগের রাতে দীর্ঘ সময় ধরে ইউক্রেনের গোলাবর্ষণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কাখোভকা বাঁধ। এক পর্যায়ে পানির চাপ সইতে না পেরে সেটি ভেঙে পড়ে।

এদিকে বাঁধ ধ্বংসের জন্য সরাসরি রাশিয়াকে দায়ী করেছে ইউক্রেন ও তার মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর দক্ষিণের কমান্ড এক বিবৃতিতে দাবি করেন, শত্রুরা হামলা চালিয়ে কাখোভকা বাঁধটি উড়িয়ে দিয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও টুইটারে লেখেন, কাখোভকা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধে বিপর্যয়ে আবারও প্রমাণ করেছে, ইউক্রেনের প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা থেকে রুশ সেনাদের তাদের বিতাড়িত করতে হবে। পরে তিনি জরুরি বৈঠক ডাকেন।