তিন ট্রেনের ভয়াবহ সংঘর্ষ: নিহত বেড়ে ২৩৩, আহত ৯০০

ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে তিন ট্রেনের মধ্যে ঘটা সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। শনিবার ভোর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন নয় শতাধিক যাত্রী। দুটি যাত্রাবীহী ট্রেনের ভেতরে এখনও অনেকে আটকা পড়ে আছেন। এসব কারণে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় উড়িষ্যা রাজ্যের বালেশ্বর জেলার এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর হিন্দুস্তান টাইমস ও দ্য হিন্দু।

দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেন

ভারতের রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, বালেশ্বর জেলার বাহানগা বাজার রেল স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনায় পড়ে আপ শালিমার-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেস, ডাউন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি। এতে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১৫টি বগি এবং বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। তিনটি ট্রেনের মধ্যে ঘটা দুই দফা দুর্ঘটনায় শনিবার ভোর পর্যন্ত ২৩৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

স্থানীয় একটি সূত্র দাবি করে, একই লাইনে চলছি একটি মালগাড়ি ও করমণ্ডল এক্সপ্রেস। হঠাৎই করমণ্ডল এক্সপ্রেস তীব্র গতিতে ওই মালগাড়ির পেছনে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনটি মালগাড়ির উপরে উঠে যায়। অন্যদিকে ২৩টি বগির মধ্যে ১৫টিই লাইন থেকে ছিটকে পড়ে পাশের ডাউন লাইনে ও নয়ানজুলিতে। সেই সময়ই ডাউন লাইন দিয়ে আসছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। সেটি এসে লাইনে পড়ে থাকা বগিগুলোর ওপর এসে আছড়ে পড়ে। হাওড়াগামী সেই ট্রেনটিরও দু’টি বগি লাইন থেকে ছিটকে পড়ে।

বিধ্বস্ত ট্রেনের বগি

দুর্ঘটনার পর একযোগে উদ্ধারকাজে নামে ভারতের সেনাবাহিনী, ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিলিফ ফোর্স (এনডিআরএফ), উড়িষ্যা ডিজাস্টার র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সসহ (ওডিআরএএফ) বেশ কয়েকটি উদ্ধারকারী সংস্থা। উদ্ধারকাজে ভারতের বিমানবাহিনীর সহায়তা চেয়েছেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুই যাত্রীবাহী ট্রেনের বগিগুলোতে এখনও অনেকে আটকা পড়ে আছেন। উদ্ধারকারী বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয়রাও উদ্ধারকাজে অংশ নেয়। গভীর রাতে ট্রেনের দরজা ভেঙে ও গ্যাস কাটারের সাহায্যে বগির বিভিন্ন অংশ কেটে উদ্ধারকাজ চালানো হয়। তবে অন্ধকারের কারণে উদ্ধারকাজে ব্যাঘাত ঘটে।

মালগাড়ির ওপর ওঠে গেছে রেলের ইঞ্জিন

তারা আরও জানান, আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হতাহতদের হাসপাতালে নিতে নিয়োজিত রয়েছে ১১৫টি অ্যাম্বুলেন্স।

এরইমধ্যে কয়েকজন চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেন। কেউ অভিযোগ করেন, তার মোবাইল খুঁজে পাচ্ছেন না। আবার কারও লাগেজ গায়েব। একজন নারী তার গলার হার ছিনতাই হয়েছে বলেও জানান। ঘটনাস্থলে থাকা এক পুলিশ সদস্য মন্তব্য করেন, এমন পরিস্থিতিতে কেউ এমনটা করবে, এটা ভাবতেও কষ্ট হয়।’

ভারতের প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুর বাড়ি দুর্ঘটনাকবলিত রাজ্য উড়িষ্যাতেই। দুর্ঘটনার পর এক টুইটে ভারতের প্রেসিডেন্ট লেখেন, দুর্ভাগ্যজনক রেল দুর্ঘটনায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত। শোকাহত পরিবারগুলোর প্রতি আমি সমবেদনা জানাচ্ছি। উদ্ধারকাজের সফলতা ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।

এদিকে দুর্ঘটনার খবরে দুঃখ প্রকাশ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইট বার্তায় লেখেন, উড়িষ্যার ট্রেন দুর্ঘটনায় খবরে আমি মর্মাহত। দুর্ঘটনায় হতাহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। পরিস্থিতি নিয়ে রেলমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছি।

দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২ লাখ রুপি এবং আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে সহায়তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি ও গুরুতর আহতদের ২ লাখ রুপি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।