ডলারের পরিবর্তে নতুন মুদ্রা চালুর প্রস্তাব লুলার

দক্ষিণ আমেরিকায় বাণিজ্যের জন্য ডলারের বিকল্প হিসেবে একটি নতুন মুদ্রা চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা। লাতিন আমেরিকার ১২টি দেশকে নিয়ে আয়োজিত এক শীর্ষ সম্মেলনে তিনি এ প্রস্তাব দেন। অন্য দেশগুলোও তার এ প্রস্তাবে সায় দিয়েছে। খবর সিএনএন।

লুলা দ্য সিলভা

সম্মেলনের আয়োজক দেশ ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ডলারের নাম উল্লেখ করা ছাড়াই বলেন, দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যেও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের বিদেশি মুদ্রার ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়। এর চেয়ে আমরা নিজেদের একটি মুদ্রা তৈরি করতে পারি।

নতুন এই মুদ্রা কীভাবে চালু করা যায়, তা খতিয়ে দেখতে এরইমধ্যে বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বলিভিয়া ও ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে লুলা

নতুন মুদ্রা ছাড়াও লুলা এ সময় আঞ্চলিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবারও চাঙ্গা করে তোলার আহ্বান জানান উপস্থিত রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রতি। তিনি বলেন, এগুলো গতিশীল হলে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

লাতিন আমেরিকার দেশগুলো গত এক দশকে অনেকটাই ডানপন্থীদের কব্জায় চলে গিয়েছিল। এখন ক্রমেই আবার তা বামপন্থীদের হাতে আসতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষকরা ব্রাজিলের ডাকা এ সম্মেলনকে বামপন্থী জোটের বৈঠক হিসেবেই দেখছেন। তারা বলছেন, একসময় লাতিন আমেরিকায় ইউনিয়ন অব সাউথ আমেরিকান নেশনসের (উনাসু) ব্লকটি যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। পরে ধীরে ধীরে তা অকেজো হয়ে পড়েছিল। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলার নেতৃত্বে আবার তা তৈরি হচ্ছে।

ব্রাজিলের এই সম্মেলনে পেরু ছাড়া আর লাতিন আমেরিকার অন্য সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা যোগ দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের সম্মেলনে ডাকা না হলেও এবার আমন্ত্রণ পেয়েছেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো। বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান তার প্রশংসাও করেন।

পুরো বিষয়টিকে একটি সংঘবদ্ধ লাতিন আমেরিকা গড়ে তোলার প্রয়াস হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, লুলার নেতৃত্বে লাতিন আমেরিকায় বামপন্থী ব্লক শক্তিশালী হলে বিশ্ব রাজনীতির অঙ্ক আবার অন্যদিকে মোড় নেবে। যাতে ডলারের প্রভাব থাকবে না বলেই তাদের অভিমত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এর আগেও এ ধরনের মুদ্রা চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তা শুরু হয়নি। তবে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে যে কোনো সময় এই অভিন্ন মুদ্রার বিষয়ে কাজ শুরু হয়ে যেতে পারে। তারা এক্ষেত্রে ইউরো মুদ্রার উদাহরণ দিয়ে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে ১৯৫০ সালের দিকে। কিন্তু সেটি কার্যকর হতে ৫০ বছরের মতো সময় লেগে যায়। ১৯৯৯ সালের ১ জানুয়ারি এ মুদ্রা কার্যকরী হয়।