অনিদ্রায় ভুগছেন কিম, বেড়েছে খাদ্যাভাবে মৃত্যু ও আত্মহত্যা

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন তীব্র মাত্রায় অনিদ্রায় ভুগছেন এবং তার ওজন বেড়ে ১৪০ কেজির মতো হয়েছে। দেশটিতে খাদ্যপণ্যের মূল্যও হু হু করে বাড়ছে। চালের দাম বিগত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। খাদ্যাভাবে মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে তিনগুণ। আত্মহত্যার হার বেড়েছে ৪০ শতাংশ। গোয়েন্দা সংস্থার বরাতে দক্ষিণ কোরিয়ার আইনপ্রণেতারা আজ এসব কথা জানিয়েছেন। খবর ইয়োনহাপ ও ডেইলি নর্থ কোরিয়া।

সমরাস্ত্র কারখানা পরিদর্শনকালে কিম জং-উন, সঙ্গে তার মেয়ে

বাজার থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মে মাসের মাঝামাঝি নাগাদ পিয়ংইয়ং অঞ্চলের বাজারে প্রতি কেজি চাল ৫ হাজার উয়ানে (কোরিয়ান পিপলস উয়ান-কেপিডব্লিউ) বিক্রি হয়েছে। ৩০ এপ্রিলের বাজারদরের সঙ্গে তুলনা করলে ১৫ দিনে চালের দাম কেজিপ্রতি ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে।

কর্নের দামও বেড়েছে। ১৪ মে পিয়ংইয়ংয়ে প্রতি কেজি কর্ন বিক্রি হয় ২ হাজার ৯০০ উয়ানে। ৩০ এপ্রিল প্রতি কেজি উয়ানের দাম ছিল ২ হাজার ৭০০ উয়ান। এ হিসাবে কর্নের দাম বেড়েছে ১৪ দিনে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এক বছর আগের তুলনায় উত্তর কোরিয়ায় চাল ও কর্নের দাম যথাক্রমে ৩০ শতাংশ ও ৬০ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে দেশটিতে খাদ্যশস্যের দাম পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছেছে। কোভিডের কারণে দুই বছর সীমান্ত বন্ধ থাকার সময়ও খাদ্যপণ্যের দাম এত বাড়েনি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীন থেকে চাল ও কর্ন আমদানি হলেও বাজারে দাম কমছে না বলে জানিয়েছেন সীমান্তবর্তী নর্থ পিয়ঙ্গান ও হাইসান প্রদেশের অধিবাসীরা।

দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএস জানিয়েছে, কিম জং-উন ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকে উত্তর কোরিয়ায় চালের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। দেশটিতে খাদ্যাভাবে মৃত্যু ও আত্মহত্যার হারও বাড়ছে। চাল ও কর্নের মতো প্রধান শস্যের তীব্র মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া সরকার গম উৎপাদনে জোরারোপ করায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

আজ সকালে দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টের গোয়েন্দা বিষয়ক কমিটির শুনানিতে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন এনআইএস ডিরেক্টর কিম কিও-হিউন। এতে উত্তর কোরিয়ার সার্বিক পরিস্থিতি এবং দেশটির নেতা কিম জং-উনের শারীরিক অবস্থা ও অন্যান্য তথ্য উঠে এসেছে বলে কমিটির সরকারি ও বিরোধীদলীয় সদস্যরা জানিয়েছেন।

রুদ্ধদ্বার শুনানি শেষে ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টির এমপি ইউ সাং-বুম সাংবাদিকদের বলেন, এপ্রিল মাস নাগাদ উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তারা অনিদ্রার সর্বাধুনিক চিকিৎসা এবং জলপিডেমের মতো নতুনতর ওষুধের বিষয়ে বিভিন্ন দেশে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এনআইএস ধারণা করছে, চেয়ারম্যান কিম ঘুমের মারাত্মক সমস্যায় ভূগছেন।

তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়া উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিদেশী সিগারেট ও উন্নতমানের স্ন্যাক্স আমদানি করছে। অনিদ্রার কারণে কিম অ্যালকোহল ও নিকোটিনের ওপর অধিকতর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারেন বলে এনআইএস আশঙ্কা করছে।

গত ১৬ মে একটি অনুষ্ঠানে যোগদানকালে কিম জং-উনের যে ছবি প্রকাশ হয়েছে, তাতে তার চোখের নিচে কালো দাগ দেখা গেছে। একইসঙ্গে তাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। কিম জং-উনের কয়েকটি সাম্প্রতিক ছবি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহারে বিশ্লেষণের মাধ্যমে এনআইএস মূল্যায়ন করেছে যে তার ওজন প্রায় ১৪০ কেজি হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার এমপি বলেন, বিগত বছর শেষের পর থেকে চেয়ারম্যান কিমের হাতে ও বাহুতে প্রায়শ থেতলানো ও দাগ দেখা গেছে। বিষয়টি এলার্জি এবং তার সঙ্গে মানসিক চাপজনিত চর্মরোগ বা ডার্মাটাটিসের ফলাফল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এনআইএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্য সংকট বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ায় খাদ্যাভাবে মৃত্যু ও আত্মহত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এক বছর আগের তুলনায় কর্ন ও চালের দাম যথাক্রমে ৬০ ও ৩০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১১ সালে কিম ক্ষমতাগ্রহণের পর খাদ্যশস্যের দাম এখন সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে। খাদ্যাভাবে মৃত্যুর ঘটনা বিগত বছরগুলোর তুলনায় তিনগুণ বেড়েছে।

এতে বলা হয়, এক বছর আগের তুলনায় উত্তর কোরিয়ায় আত্মহত্যার ঘটনা ৪০ শতাংশ বেড়েছে। বিষয়টি এমন মাত্রা ছুঁয়েছে যে কিম জং-উন নিজেই আত্মহত্যা ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থার আহ্বান জানিয়েছেন। আত্মহত্যাকে তিনি সমাজতন্ত্রের সঙ্গে প্রতারণা বলে অভিহিত করেছেন।