যত্ন নেওয়া হচ্ছে না, তাই উপহার ফেরত

২০০১ সালে শ্রীলঙ্কাকে উপহার হিসেবে একটি হাতি দিয়েছিল থাইল্যান্ড। মুথু রাজা নামের হাতিটির যত্ন নেওয়া হচ্ছে না বলে শ্রীলঙ্কার পরিবেশবাদী ও প্রাণী-অধিকার কর্মীদের অভিযোগ। অযত্নে, বয়সের ভারে মুথু রাজা এখন অসুস্থ। এ অবস্থায় থাইল্যান্ড সরকার হাতিটিকে ফিরিয়ে নিতে চার্টার্ড প্লেন ও বিশেষজ্ঞ টিম পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

বিভিন্ন দিবসে মুথু রাজাকে সড়কে ঘোরানো, প্যারেড করানো হয়

থাইল্যান্ডের কর্মকর্তারা জানান, তিনজন ভেটেরিনারি চিকিৎসক, একজন মাহুত, দুইজন সহকারীকে নিয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ টিম আগামী ১ জুলাই চার্টার্ড প্লেন নিয়ে শ্রীলঙ্কা পৌঁছাবে। তারা সঙ্গে নেবেন একটি বিশেষ খাঁচা। হাতিটিকে ফিরিয়ে নিতে থাইল্যান্ড সরকার ২ কোটি ৪৭ লাখ বাথ (৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা) প্রাথমিক ব্যয় প্রাক্কলন করেছে।

থাই বনশিল্প কর্পোরেশনের একটি সূত্র জানায়, মাহুত থংসুক মালিঙ্গম হাতিটিকে খাঁচায় প্রবেশ ও বের হবার প্রশিক্ষণ দেবেন। তিনি হাতিটির সঙ্গে পরিচিতি হতে সময় দেবেন, যাতে উড়োজাহাজে ওঠানোর সময় ভয় না পায়। যে খাঁচায় হাতিকে ওঠানো হবে, সেটা শক্ত ও চারপাশে আটকানো। ফ্লাইটের পুরো সময় হাতি দাঁড়িয়ে থাকবে। এ সময় তাকে কোনো অবশকারক ও ঘুমের ওষুধ দেওয়া হবে না। শ্রীলঙ্কা থেকে হাতিটিকে উড়োজাহাজে চড়িয়ে ফেরার পথে ফ্লাইটে ছয় ঘণ্টার মতো সময় লাগতে পারে।

জানা গেছে, ২০০১ সালে শ্রীলঙ্কাকে সাকসুরিন নামের একটি হাতির বাচ্চা উপহার দেয় থাইল্যান্ড। শ্রীলঙ্কার কালুতারা জেলার কান্দি বিহারিয়া মঠে হাতিটিকে রাখা হয়। তার নাম দেওয়া হয় মুথু রাজা। মঠে হাতিটিকে অযত্নে রাখা হচ্ছে বলে শ্রীলঙ্কার প্রাণী-অধিকার কর্মীরা বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক পিটিশন দাখিল করেছেন।

মঠের মাহুত হাতিটির পায়ে শেকল লাগিয়ে রাখে ও তার ওপর নির্যাতন চালায় বলে প্রাণী-অধিকার কর্মীদের অভিযোগ। বিভিন্ন জাতীয় ও ধর্মীয় দিবসে প্যারেডে নিয়ে হাতিটিকে বাড়তি দুর্ভোগে ফেলা হয় বলে তারা জানান।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে থাইল্যান্ডের মুভ ফরওয়ার্ড পার্টির নেতা নিতিপন পিয়ম, যিনি অচিরেই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন, তার সঙ্গে সাক্ষাত করে শ্রীলঙ্কার এনজিও রেয়ারের একটি প্রতিনিধি দল। এ সময় তারা মুথু রাজাকে দুর্ভোগ থেকে বাঁচাতে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করেন।

থাই বনশিল্প কর্পোরেশনের ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞ সিত্তিদাত মহাশঙ্কুল বলেন, আমরা চাই বার্ধক্যের সময়টায় সাকসুরিন একটু ভালো থাকুক, যত্নে থাকুক। দেশে ফেরার পর চিয়াংমাই বিমানবন্দর থেকে বিশেষ ট্রাকে তাকে লামপাংয়ের এলিফ্যান্ট হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হবে। লামপাং হসপিটালে বড় জায়গা আছে, যেখানে হাতিরা চড়তে পারে। গত ২১ বছর শ্রীলঙ্কায় বিচরণের জন্য বড় জায়গা পায়নি হাতিটি। আমাদের বিশ্বাস, জীবনের শেষ দিনগুলো সাকসুরিন লামপাংয়ে সুখে থাকবে।