আপনি পড়ছেন

ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকে রাশিয়ার আয় কমাতে বেশ কয়েক দফা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। জ্বালানি তেল, কাঠ, সার থেকে শুরু করে নিষেধাজ্ঞার খড়গ পড়েছে রাশিয়ার সোনা, হীরা ও অন্যান্য ধাতু রপ্তানির ওপরে। চীন, ভারতের মতো বিকল্প বাজারকে কাজে লাগিয়ে জ্বালানি বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একইরকম চতুরতায় রাশিয়ার সোনার কারবারও জারি রেখেছেন তিনি।

gold bullionনিষেধাজ্ঞা পাশ কাটিয়ে চলছে রাশিয়ার সোনা রপ্তানি

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে ফাঁকি দিয়ে বহাল তবিয়তে চলছে রাশিয়ার সোনা রপ্তানি। পাশ্চাত্যের বাজার বন্ধ হলেও বহুমূল্য ধাতুটির জন্য বিকল্প ক্রেতা খুঁজে বের করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্র ও জি৭ দেশগুলোর স্থলে রাশিয়ার সোনার কারবারের নতুন কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক ও চীন।

এর আগে জেপি মরগ্যান, এইচএসবিসির মতো ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে সোনা লেনদেন করত রাশিয়া। এখন সে জায়গায় এসেছে তুলনামূলক কম পরিচিত কিছু ট্রেডিং ও ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান। যেহেতু রাশিয়ার ধাতু বাণিজ্যের ওপর দ্বিতীয় স্তরের কোনো নিষেধাজ্ঞা এখনও নেই, তাই যুক্তরাষ্ট্র ও জি৭-এর বাইরের দেশগুলোর কোম্পানির জন্য এসব ধাতু কেনাবেচায় কোনো আইনি বাধা নেই। ঠিক এ সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন পুতিন।

ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে দামী ধাতু কেনাবেচার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। সারাবিশ্ব থেকে বিলাসী পণ্য ও অলংকার ক্রেতারা জড়ো হন দুবাইতে। রাশিয়ার সোনার নতুন ক্রেতাদের বেশিরভাগ এই শহরের।

রাশিয়ার কাস্টমসের তথ্যে দেখা যায়, গতবছর ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর দিন থেকে চলতি বছরের ৩ মার্চ পর্যন্ত দেশটির সোনার প্রায় এক হাজার চালান বিভিন্ন দেশের পথে গেছে। রাশিয়ার ধাতু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ায় এসব সোনা লেনদেন হয়েছে প্রায় একশ অ-রাশিয়ান কোম্পানির মাধ্যমে।

২০২২ সালে প্রায় ৭৬ টন রুশ সোনা আমদানি করেছে আরব আমিরাত, যেখানে ২০২১ সালে রাশিয়া থেকে আমিরাতে সোনা আমদানির পরিমাণ ছিল মাত্র ১ দশমিক ৩ টন। যুদ্ধ শুরুর বছরেই আমিরাতে সোনা আমদানি রপ্তানি বাবদ রাশিয়া ৪০০ কোটি ডলার আয় করেছে বলে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ।

আমিরাতের পর রাশিয়ার সোনার বড় গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে তুরস্ক ও চীন। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে ৩ মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত দুটি দেশই প্রায় ২০ টন করে রুশ সোনা আমদানি করেছে। উল্লিখিত সময়ে রাশিয়ার সোনা রপ্তানির ৯৮ শতাংশেরই গন্তব্য ছিল এ তিন দেশ।

এর আগে রাশিয়া থেকে রপ্তানিকৃত সোনার চালান সাধারণত লন্ডন যেত। সোনা লেনদেন ও মজুতের প্রথাগত বড় কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত শহরটিতে রুশ ধাতুর যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায় ইউক্রেনে আক্রমণের দুই সপ্তাহের মাথায়।

গত বছরের ৭ মার্চ লন্ডন বুলিয়ন মার্কেট এসোসিয়েশন রাশিয়ার সোনার বার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। আগস্টের শেষ নাগাদ ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও জাপান রাশিয়ার সোনার বার আমদানি নিষিদ্ধ করে। পশ্চিমা ব্যাংক, লজিস্টিকস কোম্পানি ও ধাতু শোধনকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও রাশিয়ার সোনা লেনদেন বন্ধ করে দেয়।

রাশিয়ার কাস্টমসের তথ্যে প্রমাণ মিলছে যে একে একে সব পথ বন্ধ করলেও পুতিন ঠিকই সোনার কারবারের নতুন রাস্তা বের করে নিয়েছেন। আমিরাত, তুরস্ক ও চীনের মতো যেসব দেশ রাশিয়ার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি, সেখানকার কোম্পানিগুলোই রুশ সোনার কারবারি হিসেবে হাজির হয়েছে।

ওইসিডির গোল্ড সোর্সিং এক্সপার্ট লুই ম্যারিচল মনে করেন, রাশিয়ার সোনা আকার ও আকৃতি পাল্টে পশ্চিমা দেশগুলোর বাজারেও ঢুকে পড়তে পারে। তিনি বলেন, স্থানীয় কোনো শোধনকারক যদি রাশিয়ার সোনা গলিয়ে নতুন করে কাস্ট করে এবং স্থানীয় কোনো ব্যাংক অথবা ট্রেডার তা সোর্সিং করে, তাহলে রাশিয়ার সোনা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশের বাজারে ঢুকে পড়তে দেরি হবে না।

আমিরাত সরকারের গোল্ড বুলিয়ন কমিটি বলেছে, অবৈধ পণ্য, অর্থপাচার ও নিষিদ্ধ প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা ঠেকাতে দেশটিতে সোনার কারবারে অত্যন্ত স্বচ্ছ ও তেজি প্রক্রিয়া জারি রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে মিলে জাতিসংঘ নির্ধারিত সব আন্তর্জাতিক বিধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে খোলামেলাভাবে ও সততার সঙ্গে বাণিজ্য পরিচালনা করে বলে কমিটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।

আদতে আরব আমিরাত, তুরস্ক ও চীনে রাশিয়ার সোনা রপ্তানি ও কেনাবেচায় কোনো আইন ভঙ্গ হচ্ছে না। এজন্য যুক্তরাষ্ট্র ও সমমনা দেশগুলো এখন রাশিয়ার ধাতুর কারবারে সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা ভাবছে। সেটা না হওয়া পর্যন্ত নির্দ্বিধায় বলা যায়, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দিয়ে অত্যন্ত চতুরতার মাধ্যমে সোনার বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছেন ভ্লাদিমির পুতিন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.