বাখমুত শতভাগ দখলের দাবি রাশিয়ার, পুতিনের অভিনন্দন

ইউক্রেনের সামরিক গুরুত্বপূর্ণ শহর বাখমুতে শতভাগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি করেছে রাশিয়া। মারিওপোলে রুশ বাহিনীর কাছে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের আত্মসমর্পণের প্রথম বর্ষপুর্তির দিনে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ ঘোষণা দিয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ উপলক্ষে সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মাননার ঘোষণা দিয়েছেন। খবর তাস, ইজভেস্তিয়া।

দুর্গের মতো দুর্ভেদ্য ছিল বাখমুত। কয়েক মাসের যুদ্ধে শহরের অনেকাংশই এখন ধ্বংসস্তুপ

ক্রেমলিন প্রেস সার্ভিস জানিয়েছে, আরতেমোভস্ক মুক্ত করার অভিযান সম্পন্ন হওয়ায় ভ্লাদিমির পুতিন ওয়াগনর অ্যাসল্ট গ্রুপ ও তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দানকারী রুশ সশস্ত্র বাহিনীর ইউনিটগুলোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অভিযানে বিশেষ কৃতিত্ব রাখা সবাইকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া হবে।

একইভাবে পুরস্কার ও সম্মাননার ঘোষণা দিয়ে দোনেৎস্কে রাশিয়ার নিযুক্ত প্রশাসক ডেনিস পুশিলিন বলেছেন, আরতেমোভস্কে এ বিজয় বিশেষ তাৎপর্য রাখে। এক বছর আগে ২০ মে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্দরনগরী মারিওপোলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে শহরটিতে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। এবার একইদিনে আরতেমোভস্ক মুক্ত হলো।

ইউক্রেনের বাখমুত শহরকে রাশিয়ায় আরতেমোভস্ক বলা হয়। সোভিয়েত আমলে রুশ সংগঠক আন্তন আরতেমের নামানুসারে শহরটির এ নাম রাখা হয়। ২০১৬ সালে ইউক্রেন বাখমুত নামকরণ করলেও রাশিয়ার বরাবরই আরতেমোভস্ক নাম ব্যবহার করে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় গ্রুপের গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলার সহযোগিতা নিয়ে ওয়াগনর অ্যাসল্ট গ্রুপের আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের ফলে আরতেমোভস্ক মুক্ত করার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এর আগে মস্কো সময় শনিবার সন্ধ্যায় রাশিয়ার ওয়াগনর প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানির (পিএমসি) মালিক ইভগেনি প্রিগোঝিন আরতেমোভস্কের শতভাগ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়ে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন।

তবে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আনা মালিয়ার বলেছেন, ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী বাখমুতে খুব কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছে। তারা এখনও নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে। একইভাবে ইউক্রেনীয় বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের মুখপাত্র সেরহি শেরেবাতি রয়টার্সকে বলেন, এটা (রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণের দাবি) সত্য নয়। আমাদের ইউনিটগুলো এখনও বাখমুতে যুদ্ধ করছে। আমরা বাখমুতকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছি। এ কারণে সৈন্যরা শহরের অভ্যন্তরভাগ থেকে সরে যেতে পারে।

বাখমুতে রাশিয়ার দখল ইউক্রেনীয় বাহিনীর পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাহত করবে। দোনেৎস্কের এ শহরটি ইউক্রেনের অন্যতম প্রতিরোধ বেষ্টনী। শহরের পশ্চিম, দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে ছিল প্রকাণ্ড ইমারতগুচ্ছ দিয়ে সাজানো দূর্গ। ‘বাখমুত এক অভেদ্য দূর্গ’ বলে মন্তব্য করেছিলেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা।

এক সপ্তাহ আগে থেকে রুশ কর্মকর্তারা বাখমুতের ৯৫ শতাংশের বেশি এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে আসার দাবি করছিলেন। জার্মান দৈনিক বিল্ড বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে শহরটির ৯৯ শতাংশ রাশিয়ার দখলে বলে জানায়। বাখমুতের পশ্চিমাংশে নেজদো এলাকার কয়েকটি সূউচ্চ ভবন থেকে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা তখনও প্রতিরোধ চালাচ্ছিল।

গতরাতে টেলিগ্রামে এক ভিডিও বার্তায় প্রিগোঝিন শহরের চারটি এলাকায় রাশিয়ার পতাকা ও ওয়াগনরের ব্যানার উত্তোলনের ফুটেজ সংযোজন করেন। ওয়াগনর সদস্যরা ২৫ মে পর্যন্ত বাখমুতে থাকবে এবং একটি প্রতিরক্ষারেখা (ডিফেন্স লাইন) তৈরি করবে জানিয়ে তিনি বলেন, এরপর শহরটি রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে।