বাঙালিদের ওপর জুলুমের কথা স্বীকার করলেন ইমরান খান

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত ঘটনাবলীর জন্য বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানিদের জুলুম এবং ১৯৭০ সালে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করাকে দায়ী করেছেন। আটকাবস্থা থেকে ছাড়া পাওয়ার পর শনিবার রাতে এক ভাষণে তিনি এসব বিষয়ে কথা বলেন। বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের জুলুম সম্পর্কে সে দেশের ক্ষমতা বলয়ের কারও এটাই প্রথম স্বীকারোক্তি।

এর আগে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন অথবা সাবেক কোনো সরকারপ্রধান বাঙালিদের ওপর জুলুমের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি

সাবেক পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার এখনও মনে আছে পূর্ব পাকিস্তানকে কত ঘৃণা করা হতো। এখানে তো সেগুলো কারও জানা ছিল না। আজ যেমন মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে, তখনও সেভাবে করত। পার্থক্য এটুকুই যে, এখন সোশ্যাল মিডিয়া আছে। যদিও উনারা সোশ্যাল মিডিয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন।

গণমাধ্যমের ওপর পাকিস্তানের সরকার ও সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উনারা সবাইকে নিজেদের ভার্সনটাই শোনাতে চান। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব সব বন্ধ করে দিয়েছে শুধু এজন্য যে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়া যেন কেউ জানতে না পারে। এতে দেশের কত ক্ষতি হয়েছে তার হিসাব নেই।

ইমরান খান বলেন, পূর্ব পাকিস্তানেও এমনই হয়েছিল। কারণ আমাদের এখানে ছিল নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া। পাকিস্তান টাইমস, তারা তো আমাদের কোনো খবর জানাতে চায়নি। পিটিভি ছিল। তারাও জানায়নি। আমি ইংল্যান্ডে পড়তে গিয়েছিলাম। সেখানে আমি জানতে পারি ওখানে (পূর্ব পাকিস্তানে) কি হয়েছিল।

সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে বাংলাদেশ নিয়ে নতুন এক সচেতনতা ও আলোচনা দেখা যাচ্ছে। বিশেষত গত বছর এপ্রিলে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং এরপর থেকে খান ও তার দলের বিরুদ্ধে সরকার ও সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের বর্তমান সময়কে অনেকে ১৯৭১ ও তার পূর্ববর্তী সময়ে বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসনের আচরণের সঙ্গে তুলনা করছেন।

ইমরান নিজেও সে প্রসঙ্গটিতে আলোকপাত করলেন। বাংলাদেশের নামোল্লেখ না করে একাধিকবার পূর্ব পাকিস্তান বললেও তিনি অর্ধশতাব্দী আগের ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে এমন স্বীকারোক্তি দিলেন, যা পাকিস্তানের ক্ষমতা বলয়ের মানুষদের মধ্যে অতীতে দেখা যায়নি।

তিনি বলেন, আমার জীবনে পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যুদয় হয়েছে। আমার এখনও মনে আছে। ১৯৭১ সালের মার্চে আমি সেখানে খেলতে গিয়েছিলাম, পূর্ব পাকিস্তানের অনুর্ধ্ব ১৯ দলের বিরুদ্ধে। আমাদেরকে নিয়ে যে জাহাজটি ফেরত এসেছিল, সেটাই ছিল শেষ জাহাজ।

তিনি আরও বলেন, আজকে আমাদের উপলব্ধি করা উচিত পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদের ওপর কত বড় জুলুম হয়েছিল। উনাদের যে দল নির্বাচনে জিতেছিল, যার প্রধানমন্ত্রী হবার কথা ছিল, হওয়া উচিত ছিল, তার বিরুদ্ধে মিলিটারি অ্যাকশন নিল। তারা (সামরিক বাহিনী) দেশ হারাল। ধ্বংস করল। আমাদের ৯০ হাজার সেনা বন্দী হলেন। দেশের কত ক্ষতি হয়েছে তা আপনি অনুমানও করতে পারবেন না।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় বিষয়াদিতে সামরিক বাহিনীর অন্যায় ক্ষমতা চর্চার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বদ্ধঘরে সিদ্ধান্ত হয়। অল্প কয়েকজন লোক বসে সিদ্ধান্ত নেন। তাদের জানাও নেই বাইরের পৃথিবী কিভাবে চলে। তারা বদ্ধঘরে বসেই সিদ্ধান্ত নেন। এসব সিদ্ধান্তের জেরে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়, তাও উনারা জানতে দেন না।

তিনি আরও বলেন, যখন হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট প্রণীত হলো, পাকিস্তানে তা প্রকাশ হতে দিলো না। এতো ক্ষমতা ছিল তাদের। ২৫ বছর পর ওই রিপোর্ট হিন্দুস্তানে প্রকাশ পায়। দেশ এভাবে চলতে পারে না।