কর্নাটকে কংগ্রেসে ধরাশায়ী মোদির বিজেপি

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় কর্নাটক রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির শিকার হয়েছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। ২২৪ আসনের বিধানসভায় ১৩৬ আসন জয়ের পথে রয়েছে কংগ্রেস। বিজেপি এগিয়ে আছে ৬৬ আসনে। আঞ্চলিক দল জেডি-এস জিততে চলেছে ২০ আসন। নির্বাচনের এ ফলাফলকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শোডাউনে রাহুল গান্ধীর বিজয় বলে মনে করছেন অনেকে।

কর্নাটকের নির্বাচনী ফলাফলকে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শোডাউনে রাহুল গান্ধীর বিজয় অভিহিত করেছেন অনেকে

এ নিয়ে ছয়মাসে ভারতের দুটি রাজ্যে নির্বাচনে ভরাডুবির শিকার হলো বিজেপি। এর আগে ডিসেম্বরে হিমাচল প্রদেশে ক্ষমতা হারিয়েছে দলটি। কর্নাটকের পর রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্রিশগড়ের বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপি হারবে বলে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস নেতা ও রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট।

ভারতের সাংবাদিক সুপ্রিয়া ভরদ্বাজ জানান, কর্নাটকের এবারের নির্বাচনী ফলাফল নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শোডাউনে রাহুল গান্ধীর বিজয়। নির্বাচনে বিজেপিকে জেতাতে মোদি রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে ৩৩টি জনসভা ও ২৮টি রোড শো করেছেন। আচরণবিধি ভঙ্গ করে জনসভায় সাম্প্রদায়িক স্লোগান দিয়েছেন। ‘বজরংবলী’ স্লোগান দিয়েছেন। অন্যদিকে রাহুল গান্ধী সুইগির ডেলিভারিম্যানের পেছনে মোটরসাইকেলে চড়ে রাস্তায় জনসংযোগ করেছেন। ব্যাঙ্গালোরের আইটি হাবে কফিশপে তরুণদের নিয়ে খেয়েছেন, তাদের পেশা, সমস্যা জানতে চেয়েছেন।

হিন্দুস্তান টাইমসের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গতবছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ এবারের নির্বাচনে কংগ্রেসকে এগিয়ে দিয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তামিলনাডু থেকে আন্তঃরাজ্য সীমান্ত পেরিয়ে কর্নাটকের চামারাজনাগ্রা জেলার গুনডালপেটে প্রবেশ করে রাহুল গান্ধীর যাত্রা। পরবর্তী ২২ দিনে চামারাজনাগ্রা, মহিশুর, মানডিয়া, টুমকুর, চিত্রদুর্গা, বেল্লারি ও রাইচুর জেলার ৫০০ কিলোমিটার পথ পেরোয় ভারত জোড়ো যাত্রা। কর্নাটকে রাহুল গান্ধীর ৫০০ কিলোমিটার পদযাত্রার রুটে যেসব আসন পড়েছে, তার সবকটিতে কংগ্রেস প্রার্থীরা এবার জয়ী হয়েছেন।

নির্বাচনে পরাজয় শিকার করে বিজেপি নেতা ও কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বিএস বোম্মাই বলেছেন, আমরা আত্মবিশ্লেষণ করব। জনগণের রায় শ্রদ্ধার সঙ্গে মেনে নিচ্ছি। পূর্ণাঙ্গ ফলাফল এলে আমরা শুধু সেটা খতিয়ে দেখব না, নিজেদের কোথায় খামতি ছিল তাও খুঁজে বের করব।

কর্নাটকের কংগ্রেস নেতা ডিকে শিবকুমার বলেছেন, রাজ্যের মানুষ বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পক্ষে রায় দিয়েছে। হিজাব ইস্যু, লাভ জিহাদ, মুসলমানদের কোটা বাতিলের মতো বিভাজন সৃষ্টির রাজনীতিকে দক্ষিণ ভারতের মানুষ ছুড়ে ফেলেছে।

কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, তারা রাষ্ট্রের সব সুযোগ ও শক্তি নিয়ে নির্বাচনে নেমেছিল। বিজেপি-শাসিত সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা দিনের পর দিন কর্নাটকে ক্যাম্প করেছেন। নরেন্দ্র মোদি বহুদিন কর্নাটকে অবস্থান ও সভা-সমাবেশ করেছেন। ভোটারদের প্রলুব্ধ করতে নির্বাচনের আগে একের পর এক মেগা প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন। বিজেপি নেতারা জনসভায় বলেছেন, কর্নাটকের জন্য মোদির আশীর্বাদ পেতে হলে বিজেপিকে ভোট দিতে হবে। জনগণ মোদির আশীর্বাদকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

কর্নাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা সিদ্ধারামাইয়া বলেছেন, কর্নাটক বিধানসভার এ নির্বাচন আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের ভিত্তিভূমি। বিজেপিকে হটাতে ভারতের অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়া এখন জরুরি।