সাংবাদিক হত্যা: প্রথমবারের মতো ইসরায়েলি বাহিনীর দুঃখপ্রকাশ

ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে হত্যার এক বছরের মাথায় ওই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করল ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী। আল-জাজিরায় কর্মরত থাকাবস্থায় গত বছরের ১১ মে পশ্চিম তীরের জেনিনে ইসরায়েলি সৈন্যদের গুলিতে শিরিন নিহত হন।

সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ গতবছর জেনিনে দায়িত্ব পালনকালে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন

গত এক বছর ধরে ইসরায়েল সরকার ও সে দেশের সশস্ত্র বাহিনী নানাভাবে শিরিন হত্যায় নিজেদের দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছে। স্পষ্ট ভিডিও ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও এবং নিহত সাংবাদিকের দেহ থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যবহৃত বুলেট উদ্ধার করা সত্ত্বেও তেল আবিবের কর্মকর্তারা বারবার বলেছেন, সৈন্যদের গুলিতে আল-জাজিরার সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, এটা সন্দেহাতীত নয়।

তবে গতকাল বৃহস্পতিবার সিএনএনের কানেক্ট দ্য ওয়ার্ল্ড অনুষ্ঠানে ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মুখপাত্র রিয়ার এডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, আমার মনে হয় এই সুযোগে বলা উচিত যে আমরা শিরিন আবু আকলেহর মৃত্যুর জন্য অত্যন্ত দুঃখিত।

সাংবাদিক এলেনি গিওকসের এক প্রশ্নের জবাবে হ্যাগারি আরও বলেন, শিরিন একজন সাংবাদিক ছিলেন। অত্যন্ত প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক ছিলেন তিনি। ইসরায়েলে আমরা গণতন্ত্রকে মূল্য দিই। যে কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের গুরুত্ব অনেক বেশি।

ইসরায়েলি বাহিনীর মুখপাত্র এমন সময়ে দুঃখপ্রকাশ করলেন, যার মাত্র কয়েকদিন আগেই কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) এক প্রতিবেদনে সাংবাদিকদের প্রতি ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংসতার কঠোর সমালোচনা করেছে।

সিপিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দুই দশকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে কমপক্ষে ২০ জন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছে। তবে এসব হত্যার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনী কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে, এমন প্রমাণ মেলেনি।

এতে বলা হয়, ২০০১ সাল থেকে ইসরায়েলি সৈন্যদের গুলিতে কমপক্ষে ২০ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৮ জন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক। এসব হত্যার জন্য ইসরায়েলের কোনো সৈন্যকে জবাবদিহি অথবা বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি।

ডেডলি প্যাটার্ন শিরোনামের প্রতিবেদনে সিপিজে বলেছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাতে কোনো সাংবাদিক নিহত হলে বরাবরই কিছু চেনা ঘটনা দেখা যায়। প্রথমে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা হত্যার প্রমাণ, ছবি ও সাক্ষ্য অস্বীকার করে। এরপর ঘটনার তদন্ত শেষের আগেই তারা সৈন্যদের দায়মুক্তির কথা বলতে থাকেন।

সিপিজের মতে, সাংবাদিক ও বেসামরিক নাগরিক হত্যার ঘটনায় ইসরায়েলি বাহিনীর তদন্তগুলো ব্ল্যাকবক্সের মতো, যার ফলাফল সবসময়ই গোপন রাখা হয়। একেকটি তদন্তকে মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর টেনে নেওয়া হয়, যেখানে নিহত ফিলিস্তিনি সাংবাদিকের পরিবারের পক্ষে দিনের পর দিন ন্যায়বিচারের পেছনে ছোটার সুযোগ থাকে না।